দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে প্লেসমেন্ট ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ পক্ষ এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ‘বিতর্কিত সিদ্ধান্ত’। এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। শেয়ারবাজারে আইপিওর মাধ্যমে নতুন কোম্পানি আনার কাজ করে মার্চেন্ট ব্যাংক।

বাজারের শীর্ষস্থানীয় একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে বাজারে নতুন কোম্পানি আনার ক্ষেত্রে ইস্যু ব্যবস্থাপক বা ইস্যু ম্যানেজারদের নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। যদিও মার্চেন্ট ব্যাংকাররা এ নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে কোম্পানির মালিকেরা বলছেন, নতুন এ সিদ্ধান্ত তাঁদের ওপর চাপ বাড়াবে।

শেয়ারবাজারের পাবলিক ইস্যু রুলস বা বিধি সংশোধন করে আইপিওতে প্লেসমেন্ট ব্যবস্থা চালু করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত ২৪ আগস্ট বিধি সংশোধনের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি সেই গেজেট বিএসইসিসহ শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে পৌঁছেছে।

সংশোধিত বিধিতে নতুন ধারা হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে আইপিওতে প্লেসমেন্টের ব্যবস্থাটি। নতুন বিধান অনুযায়ী, এখন থেকে শেয়ারবাজারে আসা যেকোনো কোম্পানি আইপিওর জন্য বরাদ্দ করা শেয়ারের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ ওই কোম্পানির কর্মী বা পছন্দের যেকোনো ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতে পারবেন।

যেসব কোম্পানি স্থিরমূল্য বা ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে শেয়ারবাজারে আসবে, সেসব কোম্পানি প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি করবে ফেসভ্যালু বা অভিহিত মূল্যে। আর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা কোম্পানি আইপিও প্লেসমেন্টের শেয়ার বিক্রি করতে পারবে বিএসইসি নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্যের হিসাবে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সম্মতি পাওয়ার পরই আইপিও প্লেসমেন্টের শেয়ার বিক্রি করা যাবে।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলছেন, নতুন এ সিদ্ধান্তে বিতর্ক তৈরি হবে। কিছুসংখ্যক লোককে বিশেষভাবে সুবিধাভোগী বানানো হবে। এতে আইপিও প্লেসমেন্ট নিয়ে অরাজকতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আইপিও প্লেসমেন্টের সিদ্ধান্তটি চূড়ান্তভাবে আইনি ভিত্তি পাওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার এ নিয়ে বাজারে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। কেউ কেউ বলছেন, নতুন এ বিধান আবারও শেয়ারবাজারে প্লেসমেন্ট বাণিজ্যকে উৎসাহিত করবে। নানা ধরনের চাপের মুখে পড়তে হতে পারে আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোকে।

জানতে চাইলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন দেশে কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার আগে প্রণোদনা হিসেবে কর্মীদের শেয়ারের ভাগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশেও সেটি করা যেতে পারে। কিন্তু সেই ভাগ আইপিওর ১০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। কোম্পানির কর্মীদের বাইরে ভালো ভালো দেশি-বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্যও কিছু শেয়ারের বরাদ্দ থাকতে পারে। কিন্তু যখন সেটি না হয়ে সবার জন্য তা উন্মুক্ত থাকলে তাতে কোম্পানির ওপর নানা ধরনের চাপ বাড়বে।

তবে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ভালো ভালো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে প্রণোদনা হিসেবে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এটি বাধ্যতামূলক নয়। কোনো কোম্পানি চাইলে এ সুবিধা নিতে পারে। না হলে পুরোটা শেয়ার আইপিওতে ছাড়তে পারে।

২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের জন্য প্লেসমেন্ট অরাজকতাকে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এ-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর নামে প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি করা হতো। এ জন্য বিএসইসির অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। সে সময় প্রাক্‌-আইপিও প্লেসমেন্টকে ঘিরে নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটে।

তাই ২০১১ সালে বিএসইসি পুনর্গঠনের পর প্লেসমেন্ট বাণিজ্যকে সীমিত করা হয়। আইপিওতে আসার আগে সর্বোচ্চ ১০০ ব্যক্তির কাছে প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রির বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছিল। এ অবস্থায় ২০১৯ সালে এসে কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিএসইসির অনুমোদনের বাধ্যবাধকতাটি তুলে নেওয়া হয়। এখন কোম্পানি মূলধন বাড়াতে প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি করলে বিএসইসির অনুমোদন নিতে হয় না।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, যেকোনো সিদ্ধান্তের ভালো-মন্দ উভয় দিকই থাকে। আইপিও প্লেসমেন্টের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে। তবে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত হলে কোম্পানির ওপর চাপ বাড়তে পারে।

পুঁজিবাজারের আরও খবর পড়তে ক্লিক করুন

পুঁজিবাজারে ২২ ব্যাংকের সমন্বিত বিনিয়োগ ১৫ হাজার কোটি টাকা

ডিএসই পাঁচ খাতে ভর করে লেনদেন উস্ফল্লণ

ডিএসই সূচক উত্থানে ১০ কোম্পানির অবদান ৩৪ পয়েন্ট

পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রকাশ

ডিএসই মার্কেট লিডার তালিকায় নতুন ২ কোম্পানি