বহুজাতিক ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের শেয়ারে হঠাৎ বড় চমক
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে বহুজাতিক ও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের শেয়ারে বড় উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে সাত হাজার পয়েন্টের মাইলফলক ছাড়িয়ে নতুন গন্তব্যে ছোটা পুঁজিবাজারে এবার দেখা গেল বহুজাতিক কোম্পানি ও জ্বালানি খাতের দাপট।
সিমেন্ট খাতে হাইডেলবার্গ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি ও ইউনিলিভার, ওষুধ ও রসায়ন খাতে রেকিট বেনকাইজার, টেলিকমিউনিকেশন খাতে গ্রামীণ ফোন, জ্বালানি খাতের লিনডে বিডির শেয়ার দর বেড়েছে একই দিন। ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো ও গ্রামীণ ফোনের শেয়ারদর যে হারে বেড়েছে, তা সূচক বৃদ্ধিতে রেখেছে বড় ভূমিকা।
জ্বালানি খাত চাঙা হয়ে উঠার কারণ সরকারের এক সিদ্ধান্ত। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া তিনটি কোম্পানির বিদ্যুৎকেন্দ্র নতুন করে মেয়াদ বাড়ানোতে আইনি বাধা কেটেছে সরকারের এক সিদ্ধান্তে।
যে আইনের অধীনে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেয়া হয়েছিল, তার মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়েছে। ফলে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া খুলনা পাওয়ার কোম্পানি বা কেপিসিএলের দুটি, সামিট পাওয়ার ও ওরিয়নের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো এখন সময়ের ব্যাপার। এ বিষয়ে প্রস্তাব তৈরি হয়ে আছে। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এ নিয়ে শুনানি করার পর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।
বিশেষ করে কেপিসিএলের শেয়ারধারীদের জন্য এই সংবাদ স্বস্তি নিয়ে এসেছে। লেনদেন শুরুই হয় এক দিনে দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমায়। একটি দরেই ১৫ লাখের বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সামিট পাওয়ারের দরও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। টানা বাড়তে থাকা ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের শেয়ার দর এক দিনে আরও ১২৩ টাকা বেড়ে গিয়ে দুই হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত পদ্মা অয়েল কোম্পানির শেয়ারদরও বেড়েছে ৫ শতাংশের মতো।
এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে গত কয়েকদিনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়া ডরিন পাওয়ার, শাহজিবাজার পাওয়ার ও বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার এবং জিবিবি পাওয়ার ছাড়া এই খাতের বাকি সব কটির দাম বৃদ্ধি সূচকের উত্থানে রেখেছে অবদান।
এদিকে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক বেড়েছে ৬৫ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বেড়েছে ১৭৩ পয়েন্ট। ফলে টানা ছয়দিন পুঁজিবাজারে উত্থান হলো। আর তাতে গত ছয় কার্যদিবসে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি অর্থাৎ বাজার মূলধন বেড়েছে ২৫ হাজার ২২৫ কোটি ৬৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
এদিন ডিএসইতে আর্থিক খাতের ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৬টির, কমেছে তিনটির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪টির প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৩টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৯টির, কমেছে ৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে। এছাড়াও গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, বার্জার পেইন্টস এবং ইউনিলিভারসহ অথিকাংশ বহুজাতিক কোম্পানির দাম বেড়েছে। আর তাতে পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছে।
ডিএসইর তথ্য মতে, মঙ্গলবার বাজারে মোট ৩৬৪টি প্রতিষ্ঠানের ৭০ কোটি ১০ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৯টি শেয়ার হাত বদল হয়েছে। এর মধ্যে ১৭৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ১৬৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির। আজ ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৮৬৬ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৯০১ কোটি ৫২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কিছুটা কমেছে।
বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৬৫ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে ৭ হাজার ১৪০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রধান সূচকের পাশাপাশি ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৫৫১ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩৭ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৫৮৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। দ্বিতীয় স্থানে ছিল ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো লিমিটেড। তৃতীয় স্থানে ছিল সামিট পাওয়ার শেয়ার। এরপর যথাক্রমে ছিল সাইফ পাওয়ার, লাফার্জহোলসিম, ওরিয়ন ফার্মার, বাংলাদেশ সামরেনি ক্যাবলস কোম্পানি, স্কয়ার ফার্মা, বিবিএস ক্যাবলস লিমিটেড এবং ডরিন পাওয়ার লিমিটেড।
এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭৩ পয়েন্ট বেড়ে ২০ হাজার ৮৩৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৪টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। কমেছে ১৪২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। এ বাজারে লেনদেন হয়েছে ১০৪ কোটি ১৬ লাখ ৪২ হাজার ১৯৭৫ টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৮৭ কোটি ৫৯ লাখ ৮৯ হাজার ৩১৫ টাকা।