পুঁজিবাজারের ১০ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ে বেহালদশা
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩২টি ব্যাংকের মধ্যে ১০টি ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে বেহাল অবস্থায় পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায় করতে পেরেছে ১ শতাংশেরও কম। এর মধ্যে স্যোসাল ইসলামি ব্যাংক এক টাকাও আদায় করতে পারেনি। করোনায় ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও নিয়মিত ঋণ আদায়ে ক্রমাগতই নিম্নগতির চিত্র ফুটে উঠছে। করোনার দোহাই দিয়ে সুযোগ নিচ্ছে অনেক ব্যবসায়ী। এতে করে একদিকে বাড়ছে খেলাপি ঋণ, অন্যদিকে আদায়ের নিম্নগতি ব্যাংকগুলোকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, খেলাপি ঋণ আদায়ে নাজুক অবস্থায় থাকা শেয়ারবাজারের এই ১০ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে সরকারি মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক, বেসরাকারি খাতের এবি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং স্যোসাল ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত এই ১০ ব্যাংকের মধ্যে জুন শেষে খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে এবি ব্যাংকের রয়েছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক শূন্য দশমিক ১ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংক শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংক শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ, প্রিমিয়ার ব্যাংক শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংক শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। সরকারি মালিকানাধীন রূপালি ব্যাংকও খেলাপি ঋণ আদায়ে এক শতাংশের ঘর অতিক্রম করতে পারেনি। এছাড়াও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক খেলাপি গ্রাহকদের থেকে এক টাকাও আদায় করতে পারেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুন শেষে ব্যাংক খাতের অভ্যন্তরীণ মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকগুলো আদায় করতে সক্ষম হয়েছে এক হাজার ৭৯৫ কোটি। সুতরাং সার্বিক আদায় হার এক দশমিক ৮৯ শতাংশ। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছিল। সেই সুযোগে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কিস্তি শোধ করেনি অনেকে। তবে চলতি বছরে কিছু টাকা আদায় হয়েছে, যার পরিমাণ অতি নগণ্য।
এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘জুন পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা ছিল। কিস্তির ২৫ শতাংশ দিলেই গ্রাহককে নিয়মিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কোনো টাকাই পরিশোধ করেনি গ্রাহকরা। সুযোগ নিয়েছে সবাই।’
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বেশিরভাগ মানুষ হাতে টাকা রেখে দিতে চাচ্ছেন, কারণ চলতি মূলধনের টাকায় কিস্তি দিলে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাই সবাই ঋণ পরিশোধে বিমুখ ছিলেন। তাছাড়া করোনার প্রভাব ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকায় ঋণ পরিশোধের বড় সুবিধা পাওয়ার একটা গুঞ্জন চলছিল। সেই সুবিধা পেতে ইচ্ছাকৃতভাবেই তখন তারা ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ করেননি।