আবদুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমা নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আইনের বাধ্যবাধকতায় একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। আর শেয়ারের ধারণকৃত মূল্য নির্ধারণ করা হয় বাজার মূল্যের ভিত্তিতে।

ব্যাংকগুলোর ধারণকৃত শেয়ারের মূল্য বাজারে বেড়ে গেলে আইনের বাধ্যবাধকতা অমান্য হয়ে যায়। আর রাতারাতি শেয়ার বিক্রি করে নির্ধারিত সীমার মধ্যে নামিয়ে আনা যায় না। আবার নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলেই ব্যাংকগুলোকে জরিমানা গুনতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আইনি সীমা লঙ্ঘন করে আবারও বেশ কয়েকটি ব্যাংককে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে। ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিপুল বিনিয়োগ ছিল পুঁজিবাজারে। সে সময় আইনি সীমা লঙ্ঘন করে অধিকাংশ ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপে হঠাৎ করেই ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা শুরু করলে ধস নামে পুঁজিবাজারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এনআরবি ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক আইনি সীমা লঙ্ঘন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে। ইতোমধ্যে ব্যাংক দুটিকে জরিমানা করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংককে সতর্ক করা হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।

একদিকে আশার গল্প, অন্যদিকে হতাশা। আশার কথা হলো, ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে মূলধন আরও চার হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। শুধু তাই নয়, এই বাজার ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। অন্যদিকে হতাশার চিত্রে দেখা যাচ্ছে, নীতিমালা লঙ্ঘনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাংক।

আশাব্যঞ্জক ব্যাপার, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির জন্য এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেন চালু করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই’র কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়। এদিন এসএমই প্ল্যাটফর্মে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটিরই শেয়ারের দাম বেড়েছে।

ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারেক আমিন ভূঁইয়ার আশা, ‘এসএমই প্ল্যাটফর্ম পুরোপুরি চালু হলে দেশের পুঁজিবাজার নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।’ এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোর ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের নীতিমালা লঙ্ঘনের দায়ে এক্সিম ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংককে জরিমানা করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক দুটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই অপরাধে আরও চারটি ব্যাংককে সতর্ক করা হয়েছে। এগুলো হলো ইস্টার্ন ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং অগ্রণী ব্যাংক।

এর আগে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সীমা লঙ্ঘন করে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারে বিনিয়োগ করায় ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬ক (৩) ধারার আওতায় এনআরবি ব্যাংককে ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া কোম্পানি আইনের সীমা লঙ্ঘনের মাধ্যমে বিনিয়োগ করায় এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের জরিমানা হয়েছে ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দরপতন ঠেকাতে ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী

দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ এই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের সুনির্দিষ্ট নীতিমালাও জারি করা হয়। কিন্তু কিছু ব্যাংক ওই নীতিমালা লঙ্ঘনের মাধ্যমে বিনিয়োগ করছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তের পর সেগুলোকে জরিমানা ও সতর্ক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, প্রিমিয়ার ও এক্সিম ব্যাংক নীতিমালা লঙ্ঘন করে শেয়ার কিনেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি কার্যক্রম শুরুর পরপর সেগুলো বিক্রি করে দেয় প্রতিষ্ঠান দুটি। এ কারণে প্রাথমিকভাবে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা হয়েছে। অপর চার ব্যাংককে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে নীতিমালা লঙ্ঘন করে এই তহবিল থেকে বিনিয়োগ করলে ‘বিশেষ তহবিল’ বাতিল করা হবে।