দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সাধারণ বিমা পলিসি গ্রাহকদের স্বার্থ ক্ষুণ্নের প্রমাণ পেয়ে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। এর ভিত্তিতে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি আইডিআরএর সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে কোম্পানিটির প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

দায়িত্ব নেয়ার চার মাস পরই সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লার মেয়াদ নবায়ন না করে ১০ জুন ডেল্টা লাইফের পরামর্শকের দায়িত্বে থাকা সাবেক যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলামকে প্রশাসক পদে বসায় আইডিআরএ। এবার দায়িত্ব নেয়ার চার মাসের মাথায় তিনিও পদত্যাগ করেছেন। তার জায়গায় আইডিআরএর সাবেক সদস্য মো. কুদ্দুস খানকে নতুন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

কোম্পানি সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০ অক্টোবর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ডেল্টা লাইফের প্রশাসক পদ থেকে পদত্যাগ করেন মো. রফিকুল ইসলাম। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৩ অক্টোবর) আইডিআরএর পক্ষ থেকে মো. কুদ্দুস খানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগের আদেশ জারি করা হয়।

আইডিআরএর পরিচালক মো. শাহ আলম স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার জন্য কর্তৃপক্ষ নিযুক্ত প্রশাসক অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম অব্যাহতি নেয়ায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাবেক সচিব ও আইডিআরএর সাবেক সদস্য মো. কুদ্দুস খানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এক্ষেত্রে কিছু শর্ত ও কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিয়োজিত প্রশাসক ডেল্টা লাইফের কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক মিতব্যয়িতা ও কর্মদক্ষতার সঙ্গে বিমা আইন ২০১০ অনুসারে রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

কোম্পানিটির প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ রুরাল ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিআরডিবি) সাবেক পরিচালক আব্দুল ফাত্তাহকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ করে কোম্পানির প্রশাসনিক কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এর আগে নিয়োগ পাওয়া পরামর্শকদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

আদেশে আরও বলা হয়, প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ডেল্টা লাইফের চলমান নিরীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব আইডিআরএর কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। কোম্পানির নতুন পলিসি ইস্যু আগের মতোই অব্যাহত রাখতে হবে এবং কোম্পানির ব্যবসা ও অন্যান্য কার্যক্রমও সচল রাখতে হবে। প্রশাসককে মাসিক সাড়ে ৪ লাখ টাকা সম্মানী ও এর ৬০ শতাংশ উৎসব ভাতা দেয়া হবে।

নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দেশী-বিদেশী অ্যাকচুয়ারিয়াল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানির কার্যক্রম নিরীক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে প্রশাসককে। কোম্পানি-সংশ্লিষ্ট মামলার ক্ষেত্রে আদালতের সব আদেশ ও নির্দেশ যথাযথভাবে প্রশাসককে পরিপালন করতে হবে।

এছাড়া বীমা ব্যবসা পরিচালনার সময়ে উদ্ভূত যেকোনো বিষয়ে নির্দেশনার জন্য প্রশাসককে আইডিআরএর কাছে আবেদন করতে হবে এবং কর্তৃপক্ষের দেয়া নির্দেশনা প্রশাসককে পরিপালন করতে হবে বলে আদেশে বলা হয়।

ডেল্টা লাইফে আইডিআরএ নিয়োজিত প্রশাসকরা তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে বারবার বিতর্কিত হয়েছেন। কোম্পানিটির প্রথম প্রশাসক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লার পারফরম্যান্স নিয়ে খোদ আইডিআরএ অসন্তুষ্ট ছিল। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ডেল্টা লাইফের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অহেতুক বদলি, নতুন নিয়োগ, পদোন্নতির মতো বিষয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও ছিল।

কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন আহমদ এসব বিষয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠিও দিয়েছিলেন।

এদিকে, ডেল্টা লাইফের সদ্য পদত্যাগ করা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধেও বেশকিছু অভিযোগ ছিল। এখতিয়ার-বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণে হাইকোর্ট তাকে শোকজ করেছেন। ডেল্টা লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা মনজুরুর রহমান প্রশাসকের কার্যক্রম নিয়ে হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন।

এ আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সরকার গত ৩০ সেপ্টেম্বর মো. রফিকুল ইসলামকে এখতিয়ার-বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের জন্য কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। আদালতের শোকজ করার কিছুদিনের মধ্যেই ডেল্টা লাইফের প্রশাসক পদ থেকে পদত্যাগ করলেন মো. রফিকুল ইসলাম।