দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: চার কার্যদিবস ধরে দেশের পুঁজিবাজারে টানা দরপতন হচ্ছে। এ সময়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ১২৫ পয়েন্ট হারিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সূচকের পাশাপাশি আগের দিনের তুলনায় ডিএসই দৈনিক গড় লেনদেনও কমেছে। আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, জুন ক্লোজিংয়ের কোম্পানিগুলোর আর্থিক ফলাফল এরই মধ্যে প্রকাশ হওয়া শুরু হয়েছে। এতে দেখা যায় অনেক কোম্পানির আয় বেড়েছে। যদিও কোম্পানির আয় বাড়ার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না পুঁজিবাজারে। কয়েক দিন ধরেই বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার ওষুধ ও রসায়ন এবং ব্যাংক খাতের শেয়ার বিক্রির চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি।

তার ওপর বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে পাওয়া অর্থ নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না; বরং তারা সাইডলাইনে থেকে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। অনেকেই মনে করছেন গত কয়েক মাসে পুঁজিবাজারে যে উত্থান হয়েছে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই মূল্য সংশোধন হবে। এ কারণেও অনেকেই এ মুহূর্তে বিনিয়োগ না করে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় রয়েছেন।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরুর পর সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে ৩ মিনিট পর থেকেই শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়তে থাকে। মাঝে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত দিন শেষে সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। ডিএসইএক্স ৫ দশমিক ২ পয়েন্ট কমে ৭ হাজার ২৪৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৭ হাজার ২৪৮ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ারের।

ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস বৃহস্পতিবার দিন শেষে দশমিক ৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৫৬৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা আগের দিন ছিল ১ হাজার ৫৬৬ পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে ১ দশমিক ৬ পয়েন্ট বেড়ে গতকাল ২ হাজার ৭১৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল ২ হাজার ৭১৭ পয়েন্টে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯৫২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৬টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ১১৪টির, কমেছে ২১৯টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪৩টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।

খাতভিত্তিক লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ দখলে নিয়েছে ব্যাংক খাত। ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল জ্বালানি ও বস্ত্র খাত। আর ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে চামড়া খাত।

ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল ফরচুন সুজ, বেক্সিমকো লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, এনআরবিসি ব্যাংক, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পাওয়ার গ্রিড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি) ও জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড।

ডিএসইতে বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি দর কমেছে এইচ আর টেক্সটাইল, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, আরএসআরএম স্টিল, এফএএস ফাইন্যান্স, অ্যাপেক্স ফুড, নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, ডেফোডিল কম্পিউটার্স ও আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের।