দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার টানা ১ মাস ধরে উত্তাল পাতাল পরিস্থিতির মধ্যে লেনদেন চলছে। গত ১ মাস ধরে অধিকাংশ কার্যদিবস দরপতনে লেনদেন শেষ হয়। মুলত ৩ হাজার কোটি টাকার লেনদেন এখন প্রায় ১৫০০ কোটি টাকায় এসে পৌঁছছে। এ অবস্থায় বাজার পরিস্থিতি নিয়ে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। গত ১ মাসে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরা ৩০ শতাংশ মুল পুঁজি হারিয়েছে।

এ অবস্থায় পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘একসময় পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে তিন শ-চার শ কোটি টাকা। সূচক পতন হলে ঢালাও পতন হতো। সে অবস্থা এখন নেই। আর হয়ও না। আমাদের বিনিয়োগকারীদের সূচক নিয়ে আগ্রহ বেশি। দিন শেষে সূচক কমে গেলেই তাদের ধারণা পুঁজিবাজার খারাপ হচ্ছে। এ ধারণা ঠিক নয়। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। লেনদেন এখনও ভালো অবস্থানে আছে। ফলে সূচক ও লেনদেনের কমতিতে সার্বিক পুঁজিবাজারকে খারাপ বলা অযৌক্তিক।’

পুঁজিবাজারে এক মাস ধরে যে দর সংশোধন চলছে, তা বাজারের স্বাভাবিক ঘটনা তুলে ধরে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ। টানা উত্থানের পর এ ধরনের সংশোধন আগেও এসেছে এবং সেই পর্ব শেষে বাজার এর আগেও উত্থান পর্বে গেছে, সেই বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে টানা উত্থানে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সূচক বাড়ে ১ হাজার ২০০ পয়েন্টের বেশি। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে টানা চার সপ্তাহ দর সংশোধনে এবার দেখা গেছে অভিনব ঘটনা। এই সময়ে সূচকের পতন না ঘটে বেশির ভাগ শেয়ারের দরপতন হচ্ছে।

পুঁজিবাজারে দর সংশোধন শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর থেকে। তবে এ সময়ে সূচকের টানা পতন হয়নি, যা এর আগে দেখা যেত। তবে এক মাস পরে এসে ১১ থেকে ১৪ অক্টোবর টানা চার কর্মদিবস সূচক পড়েছে ১২৪ পয়েন্ট। টানা পতন গত ফেব্রুয়ারির পরে আর ঘটেনি।

আবু আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারের সূচকের উত্থান-পতন থাকবেই। শেয়ার দরের সঙ্গে সম্পৃক্ত সূচকের উত্থান-পতন হলেও লেনদেন ঠিক থাকলে বিষয়টি আতঙ্কের নয়।’

এদিকে বিদায়ী সপ্তাহে পুঁজিবাজার বাজারে সংশোধন হয়েছে। আলোচ্য সপ্তাহে শেয়ারবাজারে সূচকের পাশাপাশি কমেছে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। এরফলে হ্রাস পেয়েছে বাজার মূলধনও। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসই কমেছে সূচক ও বাজার মূলধন। ফলে আবার বিনিয়োগকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।

বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মূলধন ছিল পাঁচ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন স্থির হয়েছে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ চার দিনে চার হাজার কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে বাজার মূলধন। এ সময় ডিএসইর প্রধান সূচক হ্রাস পেয়েছে ১১৪ পয়েন্ট। চার দিনের ব্যবধানে সূচক নেমে এসেছে সাত হাজার ৩৬৭ থেকে সাত হাজার ২৪৩ পয়েন্টে।

এদিকে টানা চার দিনের দর পতনে কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারে এ ধারা অব্যাহত থাকবে কি না-তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন এদিকে বিষয়টি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, দীর্ঘদিন বাজার ভালো থাকার কারণে এখন মুনাফা তুলছেন বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী। এ কারণে বাজারে বিক্রয় চাপ তৈরি হয়েছে, যার জের ধরে সূচক নিম্নমুখী রয়েছে।

তবে বিষয়টি নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই বলে জানান বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বিএসইসি মার্কেট পরিস্থিতি ভালো রাখার জন্য কাজ করছে, যাতে কোনো ধরনের কারসাজি না হয় সেদিকে নজর রাখছে। তবে এর মধ্যেও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে।

কারণ সর্বোপরি পুঁজি তার, তাই এর নিরাপত্তা সবার আগে তাকেই ভাবতে হবে। তাদের কোনো কারণে প্যানিক হওয়া চলবে না। আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী অল্পতেই প্যানিক হয়ে যায়।