পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ বাড়াতে সুকুক বন্ডে কর রেয়াতের সুবিধা
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সঞ্চয়পত্রের মতো ব্যক্তি পর্যায়ে শরিয়াহভিত্তিক সুকুক বন্ডে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে আয়কর রেয়াতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থবিভাগ। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ৬ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়া হয়েছে। যদিও এ সুবিধা পেতে বিনিয়োগকারীদের আগামী অর্থবছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
মুলত পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ বাড়াতে সুকুক বন্ডে কর রেয়াতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সুকুক বন্ডে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে সঞ্চয়পত্রের মতো ব্যক্তি পর্যায়ে শরিয়াহভিত্তিক সুকুক বন্ডে বিনিয়োগে আয়কর রেয়াতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যদিও বিনিয়োগকারীদের এই সুবিধা পেতে আগামী বাজেট বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে কর রেয়াতের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থবিভাগ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) একটি চিঠি দিয়েছে। গত ৬ অক্টোবর অর্থবিভাগ থেকে এনবিআরকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে নগদ অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিডিএমসি) সভা হয়। এতে সুকুক বন্ডের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আয়কর রেয়াত ও ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার ইস্যুকৃত সুকুক বন্ডে কিছু ব্যক্তি করদাতা বিনিয়োগ করেছেন। কোনো ব্যক্তি করদাতা সরকারি সিকিউরিটিজ যেমন ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করলে আয়কর রেয়াত পান। সুকুকও ট্রেজারি বন্ডের মতো সরকারের একটি ইসলামি সিকিউরিটিজ। কিন্তু ব্যক্তি করদাতাদের সুকুকে বিনিয়োগকে আয়কর রেয়াতযোগ্য হিসাবে বিবেচনার বিধান চালু হয়নি। তাই ট্রেজারি বন্ডের মতো সুকুকে বিনিয়োগকৃত অর্থকে রেয়াতযোগ্য হিসাবে বিবেচনা করা সমীচীন।
এনবিআরের আয়কর নীতি অণুবিভাগের সদস্য আলমগীর হোসেন এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, সিডিএমসির সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যেহেতু কর আরোপ ও প্রত্যাহার সংসদের এখতিয়ার। তাই সুকুক বন্ডে কর রেয়াত সুবিধা দিতে হলে আগামী বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ সংগ্রহের অংশ হিসাবে গত অর্থবছর দেশে প্রথমবারের মতো সুকুক বন্ড ইস্যু করা হয়। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যৌথভাবে এ বন্ড ছেড়েছে।
৮ হাজার কোটি টাকার এই বন্ডের অর্থ দুই দফায় বাজার থেকে তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ অর্থ সরকারের পানি পরিশোধন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এর মুনাফার হার ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও এসব বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকার কিনতে হবে।
জানা যায়, বর্তমানে সঞ্চয়পত্রসহ ৯টি খাতে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত পাওয়া যায়। একজন করদাতা বছরের মোট আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ বা দানকে কর রেয়াতযোগ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এর বেশি বিনিয়োগ করলে অতিরিক্ত অংশের কর রেয়াত পাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে করদাতার বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকার কম হলে বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ কর ছাড় পাওয়া যাবে। আর আয় ১৫ লাখ টাকার বেশি হলে ১০ শতাংশ হারে কর ছাড় পাওয়া যাবে।
যেখাতে বিনিয়োগে মিলে কর ছাড়: যেসব খাতে বর্তমানে বিনিয়োগ করলে কর ছাড় পাওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে- জীবন বীমার প্রিমিয়াম; সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা; স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা; কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বীমা তহবিলে চাঁদা; সুপার এনুয়েশন ফান্ডে প্রদত্ত চাঁদা; সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে বছরে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা ডিপোজিট করলে; সঞ্চয়পত্র ক্রয়; স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিভেঞ্চারে বিনিয়োগ; সরকার অনুমোদিত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করলে কর ছাড় পাওয়া যায়।
শরিয়াহভিত্তিক অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাপী সুকুক বন্ড বেশ জনপ্রিয়। এর মধ্যে মালয়েশিয়া সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে। বিশ্বব্যাপী মোট বিনিয়োগের ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ। সৌদি আরবের ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ, তুরস্কের ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, কুয়েতের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৬ দশমিক ১ শতাংশ, ইরানের ৪ দশমিক ৭ শতাংশ, কাতারের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং বাহরাইনের ২ দশমিক ৬ শতাংশ।