দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অপরাধে দলীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিচারের মুখোমুখিও হতে পারেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা দায়ের হতে পারে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মেয়র জাহাঙ্গীরের বক্তব্য এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক কিছু শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সভাপতিমণ্ডলীর দুজন প্রভাবশালী সদস্য। কী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে প্রশ্নে ওই দুই নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক্ষেত্রে দলের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করা হবে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘এখনই কিছু বলবো না। ১৯ নভেম্বর সিদ্ধান্ত আসবে।’ কী সিদ্ধান্ত আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সারা জীবন দেশের মানুষের মুক্তির আন্দোলনে লড়েছেন। জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেছেন। তাঁকে খাটো করার চক্রান্ত দেশের মানুষ সহ্য করবে না। এখন যা হবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হবে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির বিরুদ্ধে দেশের বিদ্যমান আইনেও ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান আছে।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনককে নিয়ে কটূক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রয়েছে। এই আইনের ২১ ধারায় বলা হয়েছে—কোনও ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালে বা তাতে মদত দিলে অনধিক ১০ (দশ) বছরের কারাদণ্ড এবং ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই অপরাধ একাধিকবার করলে সাজা যাবজ্জীবন ও অর্থদণ্ড ৩ (তিন) কোটি টাকা করার বিধানও আছে আইনে।

গোপনে ধারণকৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে মেয়র জাহাঙ্গীরকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে শোনা গেছে। বঙ্গবন্ধুর দেশ স্বাধীন করার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। অবশ্য শুরু থেকেই ভিডিওটি বানোয়াট বলে আসছেন মেয়র জাহাঙ্গীর। ভিডিও প্রকাশের পর গত ৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীরকে শোকজ করে আওয়ামী লীগ। জাহাঙ্গীর সেটার জবাবও দিয়েছেন। জানা গেছে, শুক্রবার দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ওই শোকজের জবাব নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীরের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে যে বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আমাদের আহত করেছে।’

তিনি আরও জানান, ‘জাহাঙ্গীরের বক্তব্যের সত্যতা খুঁজে পাওয়া গেছে বলেই তাকে শোকজ করা হয়েছে। ইস্যুটির মীমাংসা করতে কার্যনির্বাহী সংসদের সভা আহ্বান করা হয়েছে ১৯ নভেম্বর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। সেই আলোকেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন