দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ ও উন্নয়েনের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বিএসইসি। পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে একের পর এক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন বিএসইসি। ফলে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বাজার চাঙ্গাভাব ফেরার তিন ইঙ্গিত লক্ষ্য করা গেছে। তবে বর্তমানে খানিকটা বাজার গতিশীল হলেও স্থিতি ফেরেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এর খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজারকে তার আপন গতিতে চলতে দিতে হবে। অন্যতায় উত্থান-পতনের এই খেলা চলতেই থাকবে। বিষয়টি দ্রুত সুরাহা হওয়া দরকার ।

তবে বিএসইসি, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটিসহ (বিডা) সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিনিয়োগ আকর্ষণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড ও আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলে ধরছে। এরই ধারাবাহিকতায় জানুয়ারিতে কাতারের রাজধানী দোহায় রোড শো অনুষ্ঠিত হবে। এ সব কার্যক্রমের ফলে করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও দেশের পুঁজিবাজারে চাঙাভাব ফিরেছে, বিনিয়োগ বাড়ছে।

বিএসইসি আইনের শাসন এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করায় বাজারের প্রতি ক্রমান্বয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। যা করোনার অভিঘাত কাটিয়ে অর্থনীতিকে চাঙা করতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি স্বার্থান্বেষী গ্রুপের অপতৎপরতায় পুঁজিবাজারে বিএসইসির নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ বারবার ভেস্তে যাচ্ছে।

এদিকে  নতুন বছরের পঞ্চম কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে। এদিন সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেন। ফলে টানা ছয় কার্যদিবস পুঁজিবাজারে উত্থান হলো।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহস্পতিবার ব্যাংক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, টেলিকমিউনিকেশন খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দাম বাড়ায় সূচক বেড়েছে। অন্যদিকে বিমা, প্রকৌশল খাতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বস্ত্র খাতের শেয়ার বিক্রির ধুম পড়ে।

বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রিকে কেন্দ্র করে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকার কোটা অতিক্রম করেছে। যা দুই মাস ৯ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে গত ২৮ অক্টোবর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৭২৪ কোটি ৪৮ লাখ ১১ হাজার টাকা।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বাজারে ৩৭৯টি প্রতিষ্ঠানের ৩৭ কোটি ৭৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৩৮টি শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৬৪ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে ১৭৯টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির।

এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৯৮৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে ৮ পয়েন্ট, আর ডিএস-৩০ সূচক বেড়েছে ২৭ পয়েন্ট। এতে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি ৪৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকার শেয়ার। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪১৪ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকার শেয়ার। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড। এরপর ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, বিএসসি, পাওয়ার গ্রিড, লাফার্জহোলসিম, ফরচুন সুজ,ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড, বিএসসিসিএল, লাভেলো এবং অ্যাক্টিভ ফাইন লিমিটেড।

এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬৮ পয়েন্ট বেড়ে ২০ হাজার ৪৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসইতে ৩০৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ১৩৭টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৫টির। এ বাজারে লেনদেন হয়েছে ৪১ কোটি ২৯ লাখ ২২ হাজার ২৩৩ টাকার শেয়ার। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৩ কোটি ৪৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭১৪ টাকার শেয়ার।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ মনে করেন, এখন শেয়ারদর যে অবস্থানে আছে, তা বিনিয়োগের জন্য খুবই আকর্ষণীয়। ডিসেম্বর মাসে পুরো সময়টা ছিল মন্দার মধ্যে। এখনও যদি মন্দার মধ্যেই থাকত, তাহলে আস্থার জায়গাটি শূন্যের কোটায় নেমে আসত।

মন্দার সময় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আরও সক্রিয়তা আশা করছেন অর্থনীতির এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগাকরীরা পুঁজিবাজারে যৌক্তিক আচরণ করবে এটাই সবাই প্রত্যাশা করে। কিন্ত অনেক সময় দেখা যায় তারা সেভাবে সক্রিয় থাকে না। তবে পুঁজিবাজারে এখন যে অবস্থা তাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এখনই বিনিয়োগ করা উচিত।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উত্তম সময়। সম্প্রতি বাজার টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা পুঁজি নিয়ে দু:চিন্তায় ছিলেন। তবে গত সপ্তাহ থেতে বাজারের আচরন স্বাভাবিক। বাজার নিয়ে দু:চিন্তার কোন কারন নেই।