দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: চামড়াখাতের কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় ধস নামিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করা কোম্পানিগুলোও মহামারিকালে বড় লোকসানে নিমজ্জিত হয়েছে। তবে করোনার ২ বছর পার হলেও এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না লিগ্যাসি ফুটওয়্যার। মুলত কোম্পানিটি আর্থিক সংকটে ভুগছে চরম আকারে।

রপ্তানিতে লাভের দেখা না পাওয়ায়, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার এখন নিজেদের প্ল্যান্ট সম্প্রসারিত করে স্থানীয় বাজারে প্রবেশ করতে চায়। এ কাজে বিনিয়োগকারীদের থেকে তহবিল চায় কোম্পানিটি।  ফলে রপ্তানিমুখী ফুটওয়্যার প্রস্তুতকারক এই প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে একটি কনভার্টিবল বন্ড ইস্যু করে পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা বাড়ানোর জন্য অনুমোদন চেয়েছে।

লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাজী রাফি আহমেদ  বলেন, “আমরা স্থানীয় বাজারে ফুটওয়্যারের ব্যবসা শুরু করতে চাই। এর জন্য তহবিল প্রয়োজন। তাই পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন করা হয়েছে।”

তবে আমাদের দেশে স্থানীয় জুতার বাজার অনেক বড়। যার একটা বড় অংশ নন-ব্র্যান্ডেড কোম্পানির দখলে। আমরা যদি সাশ্রয় মূল্যে ভাল জুতা সরবরাহ করি তাহলে এই বাজার ধরতে বেশি সময় লাগবে না।”ইতোমধ্যে স্থানীয় বাজারে সরবরাহের জন্য জুতার ডিজাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন ফান্ড পেলেই আমরা কাজ শুরু করে দেব।” ২০০০ সালে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

এদিকে বিএসইসি’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির ব্যবসা ভাল চলছে না। তাই ব্যবসায় উন্নতি আনতে তাদের পরিকল্পনা জানতে চেয়েছিল কমিশন। সেক্ষেত্রে কোম্পানিটি লোকাল মার্কেটে ফুটওয়্যার ব্যবসা করার কথা জানায়। কিন্তু তাদের পক্ষে ব্যাংক ঋণ দিয়ে কারখানা সম্প্রসারণ সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, স্বল্প মূলধনী কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য কমিশনের নির্দেশনা রয়েছে। যেহেতু এই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১৩ কোটি টাকা, তাই তাদেরকে মূলধন বাড়নোর মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা রাইট শেয়ার ইস্যু না করে মূলধন বাড়াতে চায়। তাই কমিশন তাদেরকে কনভার্টিবল বন্ডের জন্য আবেদন করার পরামর্শ দেয়। এতে বন্ডের মেয়াদ শেষে তা শেয়ারে কনভার্ট হয়ে পরিশোধিত মূলধনে যোগ হবে, জানান তিনি।

এদিকে কোম্পানিটির আবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে তারা স্থানীয় বাজারে ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করতে চায়। এক্ষেত্রে তারা চামড়ার পরিবর্তে সিনথেটিক জুতা উৎপাদন করবে। ইতোমধ্যে স্থানীয় বাজারে জুতা বিক্রিতে সরকারের অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ব্যবসা শুরু করার প্রথম বছর তারা ৩০ কোটি টাকার জুতা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। পরবর্তীতে উৎপাদন ক্ষমতা ধারাবাহিকভাবে বাড়ানো হবে।

জানা যায়, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার শতভাগ রফতানিমূখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জুতার ব্যবসায় ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু রপ্তানি বাজারে কোম্পানিটি নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। বরং এক্সপোর্ট অর্ডার কম থাকায় বছরে কেবল তিন থেকে চার মাস তাদের কারখানায় জুতা উৎপাদন হয়। এ কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিদর্শক দলের পরিদর্শনে কোম্পানিটির কারখানা বন্ধ পাওয়া যায়।

এছাড়া বর্তমানে জুতা রপ্তানিতে খরচও বেড়েছে। আবার ইউরোপ এবং আমেরিকায় চামড়ার জুতার চাহিদা কমেছে। ফলে অর্ডারও অনেক কমেছে। এদিকে, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের মতো কোম্পানি রপ্তানির পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে জোর দিয়েছে। স্থানীয় বাজারে বেশ ভাল ব্যবসা করছে তারা।

২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১ শতাংশ নগদ বা শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত চামড়া খাতের কোম্পানি লিগ্যাসি ফুটওয়্যার। ২০০০ সালে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।