দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহজুড়ে পুঁজিবাজারের আলোচিত দুই ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে একটি ফু-ওয়াংফুড অধিগ্রহনের বিষয়। অন্যটি হলো শাস্তির কবলে ৭৫ ব্রোকারেজ হাউজ।

ফু-ওয়াংফুড: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ফু-ওয়াংফুডে শেয়ার ক্রয় করার পর নিয়ন্ত্রনে নিবে জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশ লিঃ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন’র (বিএসইসি) কমিশন বৈঠকে জাপানি এই প্রতিষ্ঠানকে ফু-ওয়াং ফুডসকে অধিগ্রহন করার অনুমতি দেয়া হয়।

বিএসইসি’র কমিশনার প্রফেসর শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, জাপানের প্রতিষ্ঠান মিনোরিকে ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেডের শেয়ার ক্রয় করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কোম্পানিকে অধিগ্রহনের পর প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রন গ্রহন করবে জাপানি কোম্পানি। ফু-ওয়াং ফুডসকে অধিগ্রহণ করার জন্য জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরিকে প্রাথমিকভাবে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।

এবং এই বিনিয়োগের পুরো অর্থ আলাদা একটি ব্যাংকের হিসাবে জমা দিতে হবে। বর্তমান পৃষ্ঠপোষক পরিচালকদের কোম্পানির অ্যাকাউন্টে বকেয়ার ৬.৫ কোটি টাকা জমা দিতে হবে। কারণ বিদ্যমান পরিচালকরা ফু-ওয়াং ফুডসের প্রায় ১০ লাখ সাসপেন্ড শেয়ার বিক্রি করেছে।

শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ফু-ওয়াং এর সকল ধরনের দেনা পাওনার দায়িত্ব নিবে মিনোরি বাংলাদেশ লিঃ। কোম্পানিটি অধিগ্রহনের মাধ্যমে ব্যবসা যেমন বাড়বে তেমনি সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে বলেও মনে করেন তিনি।

কোম্পানির বর্তমান স্পনসর পরিচালদের হাতে মাত্র ৮.৭৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বিএসইসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, বোর্ড পুনর্গঠন করতে পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে। কিন্তু তারা এ আদেশ পালন করতে ব্যর্থ হয়। এতে গত বছরের ১৩ জুলাই, বিএসইসি পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ প্রদান করে ফু-ওয়াং ফুডসের পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠন করে।

বিএসইসি’র শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানটি যথাযথভাবে ব্যবসা করতে পারছিল না। এতে কয়েকবছর যাবত শেয়ার হোল্ডাররা বঞ্চিত হচ্ছিলেন। গত বছরের জুলাই মাসে মিনোরি বাংলাদেশ লিঃ উৎপাদনে বন্ধ থাকা এমারেল্ড অয়েলকে অধিগ্রহন করে।

এর পর গত ৮ অক্টোবর, বিএসইসি আলিফ গ্রুপকে সিএন্ডএ টেক্সটাইল লিমিটেডকে অধিগ্রহণ করার অনুমতি দেয় যা ২০১৬ সাল থেকে বন্ধ ছিল। মিনোরি মূলত বাংলাদেশি মালিকানায় জাপানি প্রতিষ্ঠান। এই কোম্পানিটি প্রধানত ধান, শাকসবজি এবং ফলসহ অর্গানিক ফসল উৎপাদন করে এবং বাজারজাত করে থাকে।

এদিকে ফু-ওয়াং এর পণ্য তালিকায় রয়েছে ব্র্রেড, বিস্কুট, কেক, টোস্ট, ওয়েফার বার, চকলেট, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, ড্রিংকিং ওয়াটার, কার্বনেটেড ড্রিংকস এবং এনার্জি ড্রিংকস। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ফু-ওয়াং ফুডস ২০০০ সালের জুলাই মাসে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়।

শাস্তির কবলে ৭৫ ব্রোকারেজ হাউজ: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ৭৫টি ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (টেক) হোল্ডারের বিরুদ্ধে আইন বহির্ভুত কাজে জড়িত থাকার অপরাধে এসব শাস্তিমূলকত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

শাস্তি পাওয়া ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কনসোলিডেটেড কাস্টমারস অ্যাকাউন্টের অর্থ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব বিবরণী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বিভিন্নগড় মিল খুঁজে পেয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসি’র এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়ম পালন করতে উদাসিন। বিএসইসি, ডিএসই ও সিডিবিএল এর যে সকল নিয়ম কানুন না মেনে নিজেদের মতো করে চলতে চায়।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের করপোরেট কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নে বিএসইসি বদ্ধ পরিকর। আইন অমান্য করার কারণে বিএসইসি এরই মধ্যে বেশ কিছু ব্রোকারেজ হাউজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, যা আমাদের নিয়মিত কাজ। ভবিষ্যতেও এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আইন অমান্য করার কারণে শাস্তি স্বরুপ ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে এক লাখ টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। কিন্তু অপরাধের তুলনায় এই জরিমানা নিতান্তই সামান্য। জরিমানার পরিমাণ আরও বাড়ানো উচিত বলে তারা মনে করেন।