মোঃ রউফ কয়রা, খুলনা: বিশাল আয়তনের বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন বাংলাদের সুন্দরবন আজও অনেকটা অরক্ষিত। পূর্ব ও পশ্চিম ডিভিশন নামের বাগেরহাট ও খুলনায় দুটি বিভাগীয় অফিস এবং খুলনায় বন সংরক্ষকের আরোও একটি অফিস থেকে সমগ্র সুন্দরবন নিয়ন্ত্রন করা হয়।

বন সংরক্ষকের অফিসে প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছেন একজন বন সংরক্ষক (সিএফ) ও দুটি বিভাগীয় অফিসের দায়িত্বে আছেন দুই জন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও)। দুটি বিভাগ মিলে সুন্দরবনে ৪ টি রেঞ্জ অফিস রয়েছে। সেখানে সহকারী বন সংরক্ষকরা রেঞ্জের দায়িত্ব পালন করেন।

ফরেষ্ট রেঞ্জার, ডেপুটি রেঞ্জার নেই বললে চলে। এ ছাড়া ফরেষ্টার, বন প্রহরী, নৌকা চালক মিলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাজারখান জনবল বনের মূল্যবান সম্পদ রক্ষায় সার্বক্ষণিক কাজ করে চলেছেন। তবে তাদের নেই কোন সুযোগ সুবিধা।

বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ৪ টি রেঞ্জ অফিস ও ১৭ টি ফরেষ্ট ষ্টেশন অফিস ব্যতীত শ’খানেক টহল ফাঁড়ির অধিকাংশই গহীন বনে অবস্থিত। এ সকল ষ্টেশন ও টহল ফাঁড়িতে কর্মরত বনরক্ষীদের সমস্যার যেন শেষ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অপ্রতুল জ্বালানী তেলের কারণে টহল কার্যক্রম বিঘিন্ন, চোরাকারবারী দমনে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত নৌযানের অভাব মূলত সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বনরক্ষীরা জানিয়েছেন, সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেও বাড়তি সুযোগ সুবিধা পান না তারা। নিন্ম বেতন স্কেলে বেতনভাতা দেওয়া, রেশনিং ব্যবস্থা না থাকা, ঝুঁকিভাতা চালু না হওয়ায় তাদের অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন পালন করতে হয়। গহীন বনের ফাঁড়িগুলো থেকে লোকালয়ে এসে ওষুধপত্র ও প্রয়োজনীয় বাজারঘাট করা অনেক ব্যয়বহুল ও সমস্যপূর্ণ। এ ছাড়া খাবার পানির তীব্র সংকটের কারণে ট্রলার চালিয়ে লোকালয় থেকে পানি সংগ্রহ করতে তাদের সময় ও অর্থের অপচয় হয়।

পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কোবাদক ফরেষ্ট ষ্টেশনের বনপ্রহরী জানিয়েছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গহীন বনে সার্বক্ষণিক ডিউটি করি কিন্তু প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার অভাবে আমাদের মানবেতর দিন পার করতে হচ্ছে। খূলনা রেঞ্জের গেওয়াখালি বন টহল ফাঁড়ির এক স্টাফ না জানানোর স্বার্থে বলেন, দু’ঘন্টা ট্রলার চালিয়ে লোকালয়ে এসে খাবার পানি ও বাজার সওদা করতে হয়। এর জন্য কোন জালানি তেল পাওয়া যায় না।

টহলের জন্য যে তেল বরাদ্দ রয়েছে তা খুবই সীমিত। টহলে ব্যবহৃত ইঞ্জিন চালিত ট্রলারগুলোয় কোন সমস্যা দেখা দিলে মেরামতে কোন বরাদ্দ নেই। বেতনের টাকায় মেরামত করতে হয়। এ ব্যাপারে খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, আগের তুলনায় মাঠ পর্যায়ে বনরক্ষীদের সুযোগ সুবিধা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। ভবিষ্যতে তাদের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।