দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, যোগাযোগ ও আকর্ষণীয় সুযোগ গ্রহণ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আসুন, বাংলাদেশকে আপনার গন্তব্য বানান।’ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এক আয়োজনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান।

আমিরাতের চেম্বার অফ কমার্স এবং ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) মধ্যে যৌথ বিজনেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠায় দুবাই প্রদর্শনী কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আমিরাত সফররত প্রধানমন্ত্রী আবুধাবি থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এই অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন, বাংলাদেশকে আপনার গন্তব্য বানান।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের সবাইকে আশ্বস্ত করছি, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের আকর্ষণীয় স্থান। এই দেশ দ্রুত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হবে।’ বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা মানেই বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সুযোগ পাবেন। বাণিজ্যে বিদেশি মালিকানার ওপর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তা ছাড়া বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে।বিনিয়োগকারীদের তাদের মুনাফা নিয়ে যেতেও বাধা নেই।’

বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ যেন বিশ্বের সেরা গন্তব্য হয় এবং উদ্যোক্তাদের নীতিগত ও অবকাঠামোগত সহায়তা নিশ্চিত করতে তার সরকার প্রস্তুত বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। আমাদের আছে দুর্দান্ত ভূ-কৌশলগত অবস্থান। প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পরিবহন রুটের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি সংযোগ রয়েছে। এ ছাড়া জনবহুল দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার সংযোগ রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং এ অঞ্চলের আশপাশের বাজারগুলোয উন্মুক্ত প্রবেশ সুবিধা রয়েছে। এই সুবিধাগুলো বাংলাদেশকে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য এবং ভবিষ্যতের উৎপাদন ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করেছে। বাংলাদেশে রয়েছে ১৬ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষের অভ্যন্তরীণ বাজার। আর এই জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ তরুণ, উদ্যমী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী।’

বাংলাদেশে সাশ্রয়ী মূল্যে শ্রমিক পাওয়ার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের শ্রমশক্তি কঠোর পরিশ্রমী এবং তারা দ্রুত শিখতে পারে।’ সারা দেশে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধার সঙ্গে বাংলাদেশের সাড়ে ছয় লাখের বেশি দক্ষ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপার থাকার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোয় বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলো বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত।’ ‘কৃষি খাতে উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ, উৎপাদনশীলতা এবং রেমিট্যান্সপ্রবাহের কারণে অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষ তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। চামড়া, পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটজাত পণ্য, খাদ্য এবং সর্বোপরি তথ্যপ্রযুক্তি ও এই সেবা প্রদানে বাংলাদেশ ভালো করছে।’

টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, ‘মহামারিকালে বিশ্বের যে গুটিকয়েক অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমাদের স্বচ্ছ লক্ষ্য, বিচক্ষণ পরিকল্পনা, সুশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কঠোর পরিশ্রমী মানুষের অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং উদ্যমী উদ্যোক্তাদের কারণে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে।’

বাংলাদেশ এখন ‘উন্নয়নের বিস্ময়’ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, সেন্টার পর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) ধারণামতে ২০৩৬ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতি হবে। বাংলাদেশের ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন মডেল দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলেছে। এর ওপর ভর করে আরও উন্নয়ন করা যায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ তার ৪১৬ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে দ্রুতই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে।’

অনুষ্ঠানে দুবাই প্রান্তে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈদেশিক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী থানি বিন আহমেদ আল জেইয়োদি, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মোহামেদ আল মাজরোই।

পরে দুই দেশের মধ্যে একটি যৌথ বিজনেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করতে এফবিসিসিআই ও সংযুক্ত আরব আমিরাত চেম্বার্স অ্যান্ড কমার্স একটি সমঝোতা স্মারকে সই করে। দুই পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন জসিম উদ্দিন ও আবদুল্লাহ মোহামেদ আল মাজরোই।

অনুষ্ঠানে দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরে ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপরাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় সফরে আবুধাবি সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।