দেশ প্রতিক্ষণ, চট্টগ্রাম : মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আমেনা বেগম (ছদ্মনাম) চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন দুই বছরের বেশি সময় ধরে। সঙ্গে থাকছে তার চার বছর বয়সী শিশু সন্তানটিও। আমেনার নাম বন্দি তালিকায় থাকলেও সেখানে নেই ছোট্ট শিশুটির নাম। তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই। দণ্ডিত মায়ের সাথে তাকেও কারাগারে থাকতে হচ্ছে।

শুধু আমেনা নন, আমেনার মতো কক্সবাজারের নাছরিন আকতার, মমতাজ বেগমও তাদের দুগ্ধপোষ্যশিশুকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রাম কারাগারে আছেন কয়েক বছর ধরে। আমেনা বেগম, নাছরিন আকতার ও মমতাজ বেগমের সন্তানের মতো চট্টগ্রাম কারাগারে মায়ের সঙ্গে থাকছে ৬৩ নির্দোষ শিশু। এদের মধ্যে ৩২ জন ছেলে শিশু, ৩১ জন মেয়ে শিশু। গেল সপ্তাহে আজাদীকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী, বর্তমানে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি রয়েছে মোট ৭০৫১ জন। এর মধ্যে নারী বন্দি ৩৩৩ জন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি আইনজীবী আকতার কবির চৌধুরী বলেন, মহিলা রাইটার, হাজতি ও কয়েদীদের মাঝে বেড়ে ওঠায় কারাগারে থাকা শিশুদের শিশুসুলভ আচরণগুলো লোপ পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। কারাগারের ওই পরিবেশ থেকে তাদের সুস্থ পরিবেশে বড় হওয়ার বিকল্প সুযোগ বের করতে হবে।

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান বলেন, বিনা অপরাধে শিশুর কারাগারে থাকা শিশু অধিকারের লঙ্ঘন। তাদের পক্ষে কর্তৃপক্ষের গ্রহণযোগ্য ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, কারাগারে শিশুর বিচরণের জন্য অনুকূল পরিবেশ নেই। মানবিক বিকাশ একদমই ঘটছে না। এ বিষয়ে কারাগারের জেলার দেওয়ান তারিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী শিশুদের মায়েদের সাথে রাখা হয়। ৬ বছরের কম বয়সী শিশুরা এ সুযোগ পায়। এর বেশি হলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

কারাগারে থাকা শিশুদের আলাদা যত্নের ব্যবস্থা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন শিশুর যা কিছু প্রয়োজন তার সবই রয়েছে কারাগারে। হাঁটতে পারে, পড়তে পারে, খেলতেও পারে। খেলাধুলার সরঞ্জাম রয়েছে। মায়েরাও পর্যাপ্ত সময় কাটাতে পারেন তাদের শিশুদের সাথে।

তিনি জানান, দিবাযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুরা এ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। যেমন বই, আদর্শলিপি, খাতা, কলম, পেনসিল, স্লেট, চক, ছবি আঁকার বোর্ড, বল, রং পেন্সিল ও নানা রকম খেলনা হাতের কাছে পায় শিশুরা।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা ৭০৫১ বন্দির মধ্যে বেশিরভাগই হাজতি। কয়েদী রয়েছে প্রায় ৭০০ জন। এর মধ্যে ৮৮ জন হচ্ছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এদের ১ জন মহিলা।