তৌফিক ইসলাম ও এফ জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা শ্রীলংকার পুঁজিবাজারে সূচকের বড় উস্ফল্লণ হলেও উল্টো পথে হাটছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। গতকাল কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জে সব সূচকের বড় উল্লম্ফন ঘটেছে। পাশাপাশি ভারতের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কোন পথে হাঁটছে দেশের পুঁজিবাজার, এ প্রশ্ন এখন লাখ লাখ বিনিয়োগকারীদের। গত তিন কার্যদিবসে সূচকের বড় দরপতনে নতুন করে বাজারের অস্থির আচরনে বাজার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিনিয়োগকারীরা।

তাছাড়া বিএসইসি ও আইসিবি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পুঁজিবাজার ইস্যুতে বাজার বান্ধব চার সিদ্ধান্তের পরও সূচকের বড় ধরনের দরপতন নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সবার এখন একটা প্রশ্ন আবারও উল্টো পথে হাঁটছে দেশের পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজার দরপতনের পেছনে অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এখনই বাজারবান্ধব সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তা না হলে বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

এছাড়া দেশের অর্থনীতির সব সূচক যখন ওপরের দিকে উঠছে ঠিক একই সময়ে নিচের দিকে নামছে প্রধান পুঁজিবাজারের সূচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আগের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর কমছে। কোন কারণ ছাড়াই যেন বাজারে মন্দাবস্থা আগের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। আগের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে সূচকের বড় দরপতনে শেষ হয়েছে লেনদেন। একই সঙ্গে উভয় বাজারেই লেনদেনের পরিমাণ আগের দিনের তুলনায় কমেছে। এদিকে পুঁজিবাজারের অস্থিতিশীল আচরণে পুঁজি নিয়ে শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা।

বিনিয়োগকারীদের মাঝে প্রশ্ন জাগছে, বাজার কি ফের ২০১০ সালের দিকে যাচ্ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ বুধবারও মূল্য সূচকের ব্যাপক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। আজ ডিএসই প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ১০ মাসের সর্বনিম্ন অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৯৩ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ কমেছে।

এদিন ডিএসইতে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণও কিছুটা কমেছে। লেনদেনের সাথে কমেছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর ৮১ শতাংশ। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্রে লেনদেন শেষ হয়েছে। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। টালমাটাল বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে পুঁজিবাজারে টানা ছয় দিন বড় পতন হলো। আরও শতাধিক পয়েন্ট সূচক হারিয়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১০ মাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে।

এটা দিবালোকের মতো সত্য যে, দেশের পুঁজিবাজারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। পুঁজিবাজার উন্নয়নে বর্তমান কমিশন নিরলস কাজ করে যাচ্ছে এবং এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। তবে বাজারে কারা কোন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কিভাবে কারসাজি করছে, তাও এখন ওপেন সিক্রেট।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে এখন আর কথা বলতে ভালো লাগে না। পুঁজিবাজারের আচরণ নিয়ে শঙ্কিত। বর্তমান পুঁজিবাজার পুরোপুরি গুজব নির্ভর হয়ে পড়েছে। নানা গুজবের ফলে সাধারন বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য্য ধারনের বিকল্প নেই।

মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘বাজার এখন পুরোপুরি গুজবনির্ভর হয়ে পড়েছে। নানান ধরনের গুজব। এতদিন বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা হওয়া নিয়ে অহেতুক গুজব ছিল। সেই গুজবে কান দিয়ে ছোট-বড় বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। অথচ এই চরম সংকটের মধ্যেও গতকাল শ্রীলঙ্কার শেয়ার বাজারে সূচক কিন্তু ৪০০ পয়েন্ট বেড়েছে।

অথচ আমাদের বাজারে দরপতন হচ্ছেই। বুঝতে পারছি না, কেনো এমন হচ্ছে। মনে হচ্ছে সবাই গুজবের পেছনে ছুটছে।’ তিনি বলেন, ‘নতুন গুজব যোগ হয়েছে, অনেকেই নাকি শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে ডলার কিনছে।কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সবাই ডলার কিনতে গেলে এত ডলার পাবে কোথায়?