দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। টানা দরপতনে ফলে অস্বস্তি বেড়েই চলছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। বর্তমান পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়া নানামুখী গুজব ভর করে সূচকের পাল্লা দিয়ে দরপতন হচ্ছে। ফলে আস্থা সংকট ঘূনীভূত হচ্ছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিলেও দরপতন থামছে না।

সম্প্রতি পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষে বিএসইসি ও আইসিবি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে দরপতন থামছে না। বরং দিন দিন দরপতনের মাত্রা বেড়েই চলেছে। ফলে পুঁজি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে ঈদুল ফিতরের ছুটির পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ৮ কার্যদিবস দেশের পুঁজিবাজারে সূচকের বড় দরপতন হয়েছে। এর মধ্যে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ৫১ পয়েন্ট সূচকের পতন হয়। তবে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, পুঁজিবাজারের এ সংকট কাটিয়ে উঠতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)’র সমন্বিত উদ্যোগ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দায়িত্বশীল আচরন খুবই জরুরী। কারণ বর্তমান পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আচরন নিয়ে সন্দেহের তীর। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারের স্বার্থে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী হওয়া প্রয়োজন।

ঈদুল ফিতরের পর পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় ৫ মে। ১৯ তারিখ পর্যন্ত দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে মোট ১০ দিন, যার মধ্যে ৮ দিনই পতন হয়েছে সূচকের। ৫ মে লেনদেন শুরুর প্রথম দিনই প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ‘ডিএসই এক্স’ ১২ পয়েন্ট হারায়। পরের দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটির পর ৮ মে ২৬ পয়েন্ট বাড়ে সূচকটি। ৯ মে আবারও সূচক ২৮ পয়েন্ট বাড়ায় কিছুটা স্বস্তি মিলে। তবে ১০ মে সূচক ৩২ পয়েন্ট কমায় সে স্বস্তি টেকেনি, বরং হতাশা আরও বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের। কারণ ১১ মে সূচকের বড় পতন আবারও অস্বস্তিতে ফেলে বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের। সেদিন ‘ডিএসই এক্স’ হারায় ৭৩ পয়েন্ট।

১০ মে থেকে আজ (১৯ মে) পর্যন্ত টানা ৭ কার্যদিবসেই পতন হয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। এর মধ্যে ১৬ মে সর্বোচ্চ ১৩৪ পয়েন্ট হারিয়েছে ডিএসই’র প্রধান সূচক। ১৭ মে ২৭ পয়েন্ট এবং ১৮ মে ৯৩ পয়েন্টের পতন হয় প্রধান পুঁজিবাজারে। এছাড়া ১৯ মে ৫১ পয়েস্ট পতন হয়। ঈদের পরের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে চারদিন হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। আর হাজার কোটির নিচে লেনদেন হয়েছে ছয় দিন। এর মধ্যে ৫ মে লেনদেন হয় ৫০০ কোটি টাকারও কম।

ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, পুঁজিবাজার এখন গুজবের বাজার। কোন কারণ ছাড়া টানা দরপতন কাম্য নয়। বর্তমানে নানান দিক থেকে নানান ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সেই গুজবে ভয় পেয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা, বিক্রির চাপে সূচক পড়ছে।’

তিনি আরো বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখন নেই বললেই চলে। সবাই হতাশ-ক্ষুব্ধ’। ‘সত্যি কথা বলতে কি, আমরাও বুঝতে পারছি না, কেন এমনটা হচ্ছে। বাজারে উত্থান-পতন থাকবে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার তো সুনির্দিষ্ট কারণ থাকতে হবে। এখন পর্যন্ত কারণ ছাড়াই পতন হচ্ছে। পুরোপুরি গুজবনির্ভর হয়ে পড়েছে বাজার।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ সারা পৃথিবীতে ইক্যুইটি মার্কেট, স্টক মার্কেট বসে গেছে। বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য তো আরও ভিন্ন। আমাদের দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশই ট্রেডার (নিয়মিত শেয়ার বিক্রেতা), ইনভেস্টর (বিনিয়োগকারী) কম। আমাদের বিনিয়োগকারীরা মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনেন। যার কারণে তাদের দুই/আড়াই বছর বা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের কথা বললেও তাঁরা তা শুনতে চায় না।

সন্ধানী লাইফ ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নজরুল ইসলাম এফসিএমএ বলেন, পুঁজিবাজার স্বাভাবিক রাখতে বিএসইসি আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে নানামুখী গুজবের কারণে গত কয়েক দিন ধরে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। মুলত সামগ্রিক দিক থেকে বাজার এখনও স্বাভাবিক রয়েছে। মুলত সাধারন বিনিয়োগকারীদের অস্থিরতার কারণে বাজারের এ করুন দশা। বিনিয়োগকারীরা ধৈর্য্য ধরুন, আশা করি বাজার দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবো।