দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নরের মাধ্যমে ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সীমার দীর্ঘদিনের জটিলতা কাটছে’ এমন খবর ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাউর হয়ে উঠছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নরের মাধ্যমে কি বিনিয়োগ সীমার জটিলতা কী এবার কাটবে এ প্রশ্ন এবার বাজার সংশ্লিষ্টদের।  তবে পুঁজিবাজার নিয়ে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিএসইসির মধ্যে সমন্বয়ের যে ঘাটতির কথা প্রচলিত আছে তা এবার ইতিবাচক সমাধান পেতে যাচ্ছে বলে।

তবে পুঁজিবাজার উন্নয়নে দেশের আর্থিক খাতের প্রধান দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এর মধ্যে সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। যার পেছনে রয়েছে পুঁজিবাজারের প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতিবাচক মনোভাব। এতে করে পুঁজিবাজারে কিছু মৌলিক সমস্যা তৈরী হয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে আব্দুর রউফ তালুকদারের নিয়োগের মাধ্যমে সেই সমস্যা সমাধানের দ্বার খুলতে যাচ্ছে। পুঁজিবাজারবান্ধব আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পারস্পরিক বোঝাপড়া ও ঘনিষ্ঠতা এই রাস্তা সহজ করে তুলবে।

সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান কিছু ‘মৌলিক সমস্যা’ সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ভূমিকা রাখবেন। ‘পুঁজিবাজারবান্ধব’ এ গভর্নরের সঙ্গে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পারস্পরিক বোঝাপড়া সুফল বয়ে আনবে।

অর্থ সচিবের দায়িত্ব পালন করে আসা আব্দুর রউফ তালুকদারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। শনিবার রাষ্ট্রপতির নির্দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে চার বছরের জন্য তাকে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হয়েছে। আগামী ৪ জুলাই তিনি যোগদান করবেন।

এরইমধ্যে নতুন গভর্নরকে বিএসইসির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়েছে। আব্দুর রউফের যোগ্য ও কুশলী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি আরও ঘনিষ্ঠ ও নিবিড় সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে দেশের অর্থনীতিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আশা রেখেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

সূত্র বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম কমিশনে যোগদানের পর থেকেই বাজারের উন্নয়নে সিনিয়র অর্থ সচিব আব্দুর রউফের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। আর বিএসইসি চেয়ারম্যানের ডাকে সবসময় সহযোগিতার সর্বোচ্চ চেষ্টাও করেছেন রউফ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই দুজনের মধ্যে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। ফলে রউফ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হওয়ায় পুঁজিবাজার অনেকাংশেই উপকৃত হবে। বিশেষ করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সীমার জটিলতা দ্রুত কেটে যাবে বলেও মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।

নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএসইসি বলেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে আব্দুর রউফ সবসময় পুঁজিবাজারবান্ধব ভূমিকা রেখেছেন। দেশের পুঁজিবাজারের ক্রমবর্ধমান বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পাশাপাশি বাজারের উন্নয়নে তিনি প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনাও দিয়েছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারসহ আর্থিক খাতের সম্ভাবনা তুলে ধরে বিএসইসি বিভিন্ন দেশে যে রোড শো করেছে তাতেও ভূমিকা রেখেছেন আব্দুর রউফ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের রোড শোতে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে সৃষ্ট সংকটের সময় দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন আব্দুর রউফ। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের নানা সংস্কারমূলক কাজেও তিনি দিয়েছেন নেতৃত্ব।

বিসিএস ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা রউফ তার কর্মজীবনের সবচেয়ে বেশি সময় গত ২২ বছরই অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছেন। ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই থেকে তিনি অর্থ সচিব হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ২০২১ সালে ‘ন্যাশনাল ইন্টিগ্রিটি অ্যাওয়ার্ড’ পান।