দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তোমাদের চলতে হবে এবং প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের যে বিকাশ ঘটছে তারসঙ্গে তাল মিলিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। কৃষি, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতে গবেষণাই পারে এক্ষেত্রে পথ দেখাতে। আর আগামীর বাংলাদেশকে আজকের মেধাবীরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়ে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তত হতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রবিবার সকালে রাজধানীর সেগুন বাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা -২০২২’ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকের শিশুরা ভবিষ্যতে এদেশের কর্ণধার হবে। তারাই তো আমার মতো প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী, হবে শিক্ষক, বড় বড় কর্মকর্তা হবে এবং প্রশাসন, সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে দেশের উন্নতি করবে। কাজেই, সেইভাবে তারা তৈরি হোক।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সোনার ছেলে-মেয়েরা তোমরা তৈরি হও আগামীতে দেশকে নেতৃত্ব দিতে। সর্বক্ষেত্রেই তোমরা তোমাদের মেধার বিকাশ ঘটাবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যেন বাংলাদেশ আর পিছিয়ে না থাকে, বাংলাদেশ এগিয়ে যায় এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা আরও উন্নত হয়।’

এ সময় তিনি বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদেরকেও এই মেধা অন্বেষণে যুক্ত করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান। বলেন, এদের মধ্যেও বিশেষ প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে এবং এরাও আমাদের সন্তান এবং আপনজন সেই বিবেচনায় এদেরকেও মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে। কাজেই নতুন প্রজন্মকে আমি বলব, সবাইকে নিয়ে চল। তবেই আমরা সাফল্য অর্জন করতে পারবে। পুরস্কার বিজয়ী সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তোমাদের যে সুপ্ত মেধা সেটাই আমাদের ভবিষ্যৎ।

বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ নীতিমালা-২০১২ প্রণয়ণের মাধ্যমে ২০১৩ সাল থেকে মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রতিযোগিতাটির নামকরণ করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা’।

দেশে সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিনটি গ্রুপে (ষষ্ঠ-অষ্টম, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ) বিভক্ত করে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রতিযোগিতা।

অনুষ্ঠানে ভাষা-সাহিত্য, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটার, বাংলাদেশ স্টাডিজ এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ ও মুক্তিযুদ্ধ (শুধুমাত্র বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য)সহ মোট পাঁচটি বিষয়ে তিনটি গ্রুপে দেশের ১৫ জন মেধাবীকে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ পুরস্কার দেওয়া হয়।

এ বছর এপ্রিল-মে মাসে প্রতিষ্ঠান, উপজেলা, জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা মোট ১৩২ জন থেকে বিচারকদের মূল্যায়নে ১৫ জন এবছরের সেরা মেধাবী নির্বাচন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যককে ২ লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট, মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. কামাল হোসেন বক্তৃতা করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

জাতির পিতার বক্তব্য-‘সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য সোনার মানুষ চাই’-এর উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থাৎ সেবার মানসিকতাটা সবার মাঝে থাকতে হবে। চাকরিজীবী থেকে শুরু করে যেখানে যে আছেন, সবাই মনে রাখবেন আমাদের দেশের যে সম্পদ তার সব কিছুই জনগণের সম্পদ।

তিনি বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছেন দেশ ও এর জনগণের জন্য কাজ করতে। কাজেই, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক যখন মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ দিল তিনি তখন সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। যা তারা প্রমাণ করতে পারেনি।

সরকারপ্রধান বলেন, দুর্ভাগ্য হলো আমাদের দেশেরই কোনো কোনো ব্যক্তির প্ররোচনাতেই এটা ঘটে। তবে আমরা নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেখিয়েছি হ্যাঁ বাংলাদেশও পারে, আমরা পারি।

শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তাদের সবসময় এটা মাথায় রাখতে হবে যে আমরা বিজয়ী জাতি এবং বিশ্বে সবসময় মাথা উঁচু করে চলব, সম্মানের সঙ্গে চলব। আর এই দেশ আমাদের এ দেশকে আমরা গড়ে তুলব উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে।

তাঁর সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা এবং বিদ্যুৎ সহ নানা নাগরিক সেবা তৃণমূল পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আধুনিক বিজ্ঞান চর্চা এবং প্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব এবং সেটা আজকের যারা নতুন প্রজন্ম তারাই পারবে।

তিনি এই মেধা অন্বেষণকে একটি চমৎকার ব্যবস্থা আখ্যায়িত করে বলেন, এর মাধ্যমে অনেক সুপ্ত প্রতিভা বের হয়ে আসবে যারা আগামীতে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগবে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা বা নতুন প্রজন্ম প্রযুক্তি বিকাশের এই যুগে জন্ম নেওয়ায় প্রাকৃতিকভাবেই অনেক মেধাবী উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের যে সুপ্ত মেধা রয়েছে সেটাকেই আমাদের অন্বেষণ করতে হবে এবং সেটাকেই আগামীর উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কাজে ব্যবহার করতে হবে।

সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তাঁর সরকার যেন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে তেমনি ছেলে-মেয়েদের আরো ভালভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সুযোগও সৃষ্টি করে দিচ্ছে, বলেন তিনি। প্রতিটি উপজেলায় তার সরকারের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুবিধাবঞ্চিত ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ডে সিড মানি হিসেবে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমরা ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি বই উৎসব পালন করি। মহামারিকালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।