দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: হজে গিয়ে ভিক্ষা করার সময় সৌদি আরবের পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি মতিয়ার রহমান ছিলেন ডাকাত দলের সরদার। ডাকাতি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে দুই হাত হারান। পরে পেশা বদলে বনে যান ‘আন্তর্জাতিক ভিক্ষুক’। হজের সময় সৌদি আরব ছাড়াও অন্য সময় ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশে গিয়ে ভিক্ষা করতেন মতিয়ার। এই ভিক্ষাবৃত্তি করেই মেহেরপুরে গাংনীতে গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদ। তবে মতিয়ারের এই ভিক্ষাবৃত্তির বিষয়ে জানত না বলেই ভাষ্য পরিবারের।

মতিয়ার রহমান প্রতি বছর হজের মৌসুমে সৌদি আরবে ভিক্ষাবৃত্তি করেন। তার সব চেয়ে বেশি আয় হতো হজের সময় সৌদি আরবে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে। দেশটিতে হজের মৌসুমে ভিক্ষা করেই মতিয়ারের কামাই হতো লাখ লাখ টাকা। দেশে ফিরে সেই টাকা দিয়ে কিনতেন জমি। গত ১৫ বছরে আয় করা কোটি টাকায় কিনেছেন ২০ বিঘার বেশি কৃষিজমি।

হজের নামে সৌদি আরবে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা মতিয়ার গাংনী উপজেলার সিন্দুরকোটা গ্রামের ভাটপাড়ার বাসিন্দা। গ্রামের সবাই তাকে ‘মন্টু ডাকাত’ নামেই চেনে। স্থানীয়রা জানেন, মতিয়ার এ পর্যন্ত ১২ থেকে ১৩ বার হজে গিয়েছেন।

পরিবারের সদস্যদের দাবি, মতিয়ার বিদেশে গিয়ে ভিক্ষা করতেন সেটা তারা জানতেন না। তবে এবার সৌদি আরবে ভিক্ষাবৃত্তির দায়ে ধরা পড়ার পর তারা শুনেছেন মতিয়ারের এই অপকীর্তির খবর।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে গেল দুটি হজের সময় সৌদি আরবে যেতে পারেননি মতিয়ার। এবার বিদেশি মুসল্লিদের জন্য হজ উম্মুক্ত হওয়ায় ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিস এজেন্সি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হজে যান মতিয়ার। গত ২২ জুন সৌদি আরবের স্থানীয় সময় বিকালে মদিনা শরীফে ভিক্ষা করার সময় তাকে গ্রেপ্তার করে সৌদি পুলিশ। ঘটনা জানার পর বাংলাদেশ হজ মিশনের একজন কর্মী মুচলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন।

২৬ জুন রবিবার হজ সম্পর্কিত ওয়েব সাইটে এক নোটিশের মাধ্যমে বাংলাদেশ হজ্জ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে। তাতে ভিসার শর্ত ভঙ্গের কারণে মতিয়ার রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। মতিয়ারের ঘটনায় তাকে হজযাত্রী হিসেবে সৌদি আরবে পাঠানো ধানসিঁড়ি ট্রাভেলস এয়ার সার্ভিসকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, মতিয়ার ‘সৌদি আরবে ব্যাগ ছিনতাই হয়েছে’ বলে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে ভিক্ষা করছিলেন। এতে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পরে তদন্তে জানা যায়, ধানসিঁড়ির সেই হজযাত্রীকে গাইড করার মতো সৌদিতে কোনো মোনাজ্জেম (হজ এজেন্সির মনোনীত প্রতিনিধি) এবং তার বসবাসের বাড়ি কিংবা হোটেলও ছিল না। এ ধরনের কাজের জন্য হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে কেন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যাসহ ওই ট্রাভেল এজেন্সির কাছে জানতে চেয়েছে মন্ত্রণালয়।

গাংনীর সিন্দুরকোটা গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, মতিয়ার ডাকাতি করার সময় ধরা পড়ে গণপিটুনিতে দুই হাতের কবজি হারান। এরপর তিনি ভিক্ষাবৃত্তিতে নামেন। তবে গ্রামে ভিক্ষা করতেন না। প্রতি বছর হজ মৌসুমে সৌদি আরবে গিয়ে ভিক্ষা করতেন।হজের মৌসুম শেষ হলে বেশিরভাগ সময় কাটাতেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। ধরা না পড়লে কেউ জানতেই পারতো না যে তিনি বিদেশে ভিক্ষা করেন।

তার এলাকার লোকজনের ভাষ্য, বারবার হজে গেলেও মতিয়ারকে তারা কখনো নামাজ পড়তে দেখেননি। সৌদি আরবে ধরা পড়ার খবর শুনে তারা এখন মনে করছেন হজ করা তার উদ্দেশ্য ছিলো না। তার আসল উদ্দেশ্য ছিলো ভিক্ষাবৃত্তি করে অসৎ উপায়ে টাকা কামাই করা।

মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন যে, হজের অজুহাতে মতিয়ার প্রতি বছর সৌদি গিয়ে ভিক্ষা করেন। যা দিয়ে তিনি কয়েক বিঘা জমিও কিনেছেন ইতোমধ্যে। ভিক্ষাবৃত্তির কাজ করেই করে আজ তিনি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক।

মেহেরপুর জেলা হাজি সমিতির সভাপতি গোলাম রসুল বলেন, ‘মতিয়ার যে কাজ করেছে তা বাংলাদেশি হাজিদের জন্য এবং দেশের জন্য লজ্জার।’

মতিয়ারের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে জানিয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম বলেন, ‘এরইমধ্যে আমরা মতিয়ারের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। দেশে ফিরলেই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’