দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আসছে। বড় ধরনের বিদেশী বিনিয়োগের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতো পারে পুঁজিবাজার এমনটাই প্রত্যাশা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। কারণ গত তিন কার্যদিবস বাজার সামান্য সূচকের উত্থানের মধ্যে দিয়ে স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে পুঁজিবাজার। ফলে টানা কয়েক কার্যদিবস বাজার উত্থান থাকলে আস্থা বাড়বে বিনিয়োগকারীদের মাঝে।

গত ১০ মাস টানা দরপতনে বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছেন বিনিয়োগকারীরা। এ অবস্থায় আস্থা ফেরাতে টানা উত্থানে বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এছাড়া বিদেশি বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসবে বলেও মনে করছেন তারা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডন গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট দেশের পুঁজিবাজারে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করবে। আর এতে বাজারে এ তারল্য প্রবাহ বাড়বে। আর তারল্য প্রবাহ বাড়লে বাজার গতিশীল হবে, যা বাজারে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণও অনেক বড় হবে বলে জানা গেছে।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পুঁজিবাজার বর্তমানে টালমাটাল অবস্থায় চলছে। এ অবস্থায় বাজারের গতি ফেরাতে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। এ মুহূর্তে বিদেশি বিনিয়োগ বাজারের জন্য খুবই ইতিবাচক হবে। বিনিয়োগকারীদের মনে তা আশার সঞ্চার করবে। সবার মনে আবারও চাঙাভাব ফিরে আসবে।

এ বিষয়ে ডিএসইর সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশীদ লালী বলেন, ‘বিনিয়োগ পুঁজিবাজারের জন্য সব সময়ই ভালো। সেটা দেশি হোক বিদেশি হোক। যেহেতু বিদেশি বড় একটা বিনিয়োগ বাজারে আসতে যাচ্ছে সেহেতু আশা করা যায় এটা বাজারের জন্য অনেক ইতিবাচক হবে।’
এ নিয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানা গেছে, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এই বিনিয়োগ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে আসবে। তবে বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ কত হবে তা জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে অঙ্কটা বেশ বড় হবে।

যা নিয়ে গত রবিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে পুঁজিবাজারে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে কিছুটা সূচকের উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে টানা তিন কার্যদিবস ধরে সূচকের উত্থানের ফলে আগ্রহ বাড়ছে বস্ত্র খাতের বিনিয়োগকারীদের মাঝে।

এছাড়া বেশ কিছুদিন পর ব্যাংক খাতে বেশির ভাগ শেয়ারের দর বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে। তেমনি প্রকৌশল এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতেও বেশির ভাগ কোম্পানির দর বেড়েছে। অল্প অল্প করে হলেও টানা তৃতীয় দিন সূচক বাড়ল পুঁজিবাজারে। তলানি থেকে দুই দিনে উঠে আসা লেনদেনও ধরে রেখেছে তার অবস্থান। আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের পর থেকে ঝিমুতে থাকা পুঁজিবাজারে বাজেট পাসের আগে আগে কিছুটা হলেও প্রাণ ফেরার চিত্র দেখা যাচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে প্রকৌশল ও বস্ত্র খাতের শেয়ারে আধিপত্য বিস্তার ছিল। লেনদেনের ৩০ দশমিক ৬২ শতাংশই হয়েছে এই দুই খাতে। আগের দিনও সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল বস্ত্র খাতে। বেশ কিছুদিন পর ব্যাংক খাতে বেশির ভাগ শেয়ারের দর বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে। গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় বস্ত্র খাতও বেশ ভালো করেছে। প্রকৌশল এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতেও বেশির ভাগ কোম্পানির দর বেড়েছে।

দর বাড়ার শীর্ষে আবার স্বল্প মূলধনি বা দুর্বল কোম্পানির প্রাধান্য দেখা গেছে। অন্যদিকে মৌলভিত্তির কোম্পানিতে লেনদেন দেখা গেছে কম। আবারও বিপুলসংখ্যক কোম্পানির শেয়ার দিনের দরপতনের সর্বনিম্ন সীমা ছুঁয়ে ফেলার পর ক্রেতাশূন্য হয়ে যায়। এর মধ্যে পাঁচ বছর পর উৎপাদন শুরু করার ছয় মাস পর তেল বাজারজাত করার ঘোষণা দেয়া এমারেল্ড অয়েলও ছিল।

এদিন পুঁজিবাজারে প্রধান প্রধান সূচক সামান্য বেড়েছে। সূচক বাড়লেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর এবং টাকার পরিমাণে লেনদেনও কমেছে। আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭.৮৭ পয়েন্ট বা ০.১২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৫০.৪৬ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ০.৫৯ পয়েন্ট বা ০.০২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৯৫.১৮ পয়েন্টে। তবে শরিয়াহ সূচক ০.২৪ পয়েন্ট বা ০.০১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৮৫.৪০ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৮৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৮১৮ কোটি ৮২ লাখ টাকার।

ডিএসইতে আজ ৩৮১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫৭টির বা ৪১.২১ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ১৭২টির বা ৪৫.১৪ শতাংশের এবং ৫২টির বা ১৬.৬৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ২৬.৮৩ পয়েন্ট বা ০.১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬৯০.৪৯ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৯৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১১৬টির, কমেছে ১৩৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৮টির দর। আজ সিএসইতে ২০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।