বরিশাল ব্যুরো, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশে রেকর্ড গড়ার টার্গেট সৃষ্টি হচ্ছে। রাত পোহালেই বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। বরিশালের সঙ্গে সারাদেশের পরিবহন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বরিশালে পৌঁছে গেছেন। শুক্রবার রাত সোয়া আটটায় বিমানযোগে বিএনপির স্থায়ি কমিটির সদস্যরা বরিশালে এসে পৌছান।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ি কমিটির সদস্য মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ আরো বেশ কয়েকজন এক সাথে এসে পৌঁছান বলে আমার সংবাদকে জানান বিএনপির মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান। এর আগে সড়কে সড়কে বাধা পেয়ে বিএনপির নেতারা বাবুর্চি নিয়েই যাত্রা শুরু করেন, শুক্রবার মাঠেই রান্না- খাওয়া-দাওয়া সারেন।

তাবলীগ জামায়াত স্টাইলে দলবদ্ধ হয়ে হেঁটে সমাবেশস্থলে অবস্থান করেন অনেকে। ৫-৭ দিন আগে বরিশালে গিয়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বরিশালের ব্যবসা-বাণিজ্য রমরমা বলে খবর পাওয়া গেছে। এদিকে একমাঠেই বিএনপি-প্রশাসনের কর্মসূচী ঘিরে উত্তেজনাো রয়েছে। তবে পুরো মাঠে বিএনপির ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। প্রথমে চট্টগ্রামে বিভাগীয় সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ ভাবে করতে পারলেও ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরে কর্মসূচির পূর্বে পরিবহন ধর্মঘটের কবলে পড়ে দলটি। বরিশালেও এর ব্যতিক্রম নয়।

এক সপ্তাহ পূর্বেই ৪ ও ৫ নভেম্বর অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাস মালিক সমিতি। একই সময় তিন চাকার যানেরও ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সর্বশেষ লঞ্চ স্পিডবোট বন্ধ করার ঘোষণা এসেছে। এত প্রতিবন্ধকতার পরেও বিএনপির টার্গেট বরিশালে রেকর্ড গড়ার। এর আগের চারটি বিভাগীয় গণসমাবেশের পূর্বে নানান প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয় বিএনপিকে। সেই প্রতিবন্ধকতার কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই বরিশালে পৌঁছেছেন বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী।

এত প্রতিবন্ধকতার বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে ব্যাপক জনসমাগম ঘটেছে। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দৃঢ়তা ও সাহসিকতায় উজ্জীবিত দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। বিভাগীয় বাকি সমাবেশগুলোতে বাধা দিয়েও জনস্রোত ঠেকানো যাবে না বলে মনে করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব।

ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরে সমাবেশ সম্পূর্ণ করেছে বিএনপি। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সমাবেশে বাধার মুখে যে পরিমাণ নেতাকর্মীদের উপস্থিতি হয়েছে, বিএনপি নেতারা বলছেন, বরিশালের তার চেয়ে বেশি হবে। এরমধ্য দিয়ে বরিশালে বৃহত্তর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে চায় বিএনপি।

বিএনপি নেতারা বলছেন, বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশে যাতে মানুষ আসতে না পারে সেজন্য ৪ ও ৫ নভেম্বর সড়ক পথের সব ধরনের গাড়ি বন্ধ রাখতে সরকারের নির্দেশে ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা যে সকল হোটেলে অবস্থান নিয়েছে সেখান থেকে বের করে দেওয়ার হচ্ছে। এমনকি বাড়ি বাড়ি পুলিশ রেড দিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন বলেও বিএনপি নেতাদের অভিযোগ। তবে যে কোনো মূল্যে গণসমাবেশ সফলের প্রস্তুতি নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। তারা বলছেন, এতকিছুর পরেও সমাবেশে জনতার ঢল নামবে।

জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এছাড়া মহানগরীর মধ্যে নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সমাবেশ স্থলে হাজার হাজার নেতাকর্মী অবস্থান করছেন। এখানে তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। তাদের খাওয়া দাওয়ার জন্য মাঠের মধ্যেই রান্নার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, আন্দোলন এখন এমন একটি পর্যায়ে গিয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি গ্যাস বিদ্যুতের জন্য মানুষ দিশেহারা। সাধারণ মানুষ এখন অসহায় তারা আওয়ামী লীগের লুটপাট, অত্যাচার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এই অবৈধ সরকারের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

বিএনপি ক্ষমতা যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে না, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছে। সরকার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সেটার প্রতিফলন ৫ নভেম্বর বরিশালে সমাবেশ কোনো বাধায় কাজ হবে না। চারদিন যাবত বরিশালের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা কর্মীরা চলে এসেছে। আমরা আশা করব এটা গণসমাবেশ নয়, মহাসমাবেশে পরিণত হবে। বরিশালের সমস্ত রাস্তাঘাট স্তব্ধ হয়ে যাবে। যতই বাধা দেওয়া হোক সমাবেশ সফল করতে মানুষ আসবেই। ইতোমধ্যে হোটেল-মোটেল ভর্তি হয়ে গেছে। বরিশাল শহরের নেতাকর্মীরা তাদের বাসা-বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেছে।

গাড়ি লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়াতে সমাবেশে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বরিশালটাইমসকে বলেন, প্রভাব পড়ার জন্যই তো এত অপচেষ্টা, আমরা ইনশাআল্লাহ সমাবেশ সফল করব। সকল অপচেষ্টা, অপকৌশল, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, খুন, গুমের বিরুদ্ধে, নেত্রীর মুক্তির দাবিতে আমাদের এই সমাবেশ। মানুষ যে তাদের চায় না এটা সমাবেশের মধ্য দিয়েই প্রমাণ হবে। মানুষ সকল বাধা পেরিয়ে চলে আসবে। আমাদের প্রস্তুতি খুবই ভালো, গণসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে ইতোমধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মী বরিশালে চলে এসেছে। মাঠের মধ্যে রান্নাবান্না খাওয়া-দাওয়া মিছিল এভাবেই চলছে। পাকিস্তানও মুক্তিযুদ্ধের সময় সকল কিছু বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু কোনো লাভ হয়েছে? মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ যে লক্ষ্য সেটা এ সরকার গায়েব করে দিয়েছে।

এ সরকার থেকে সেটা ফিরিয়ে আনার জন্যই তাদেরকে সরে যাওয়া দরকার। মানুষ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে তারা হাজারো বাধা অতিক্রম করে সমাবেশ সফল করবে। তারপর জন রায় দিবে যে তোমাদেরকে আর প্রয়োজন নেই। সেটার প্রমাণ হচ্ছে সকল বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়া।

আলাল বলেন, এখন হোটেলগুলো থেকে আমাদের নেতাকর্মীদেরকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন থানায় রাতে পুলিশের রেড চলছে, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করছে, ভয় দেখানো হচ্ছে পথে পথে। এই হচ্ছে অবস্থা কিন্তু কোনো বাধাই কাজ হবে না। ইনশাল্লাহ আগামীকাল বরিশালের সমাবেশ অন্য যেকোনো সমাবেশ থেকে উচ্চতায় পৌঁছাবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ময়মনসিংহ, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে যেভাবে গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে বরিশালেও তার ব্যতিক্রম নয়। গাড়ি বন্ধ করার পরেও সমাবেশ তো আটকে থাকেনি। পূর্বের সমাবেশগুলো সকল বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে সফল করেছি বরিশালেও সফল করব।’