দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: চার বছর পর আগামী ৮ ও ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনকে ঘিরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সংগঠনটির শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা। সম্মেলনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই লবিং-তদবিরের ব্যস্ততা বাড়ছে এই নেতাদের। শীর্ষপদে কারা আসছেন এ নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।

তবে এবারে শীর্ষ নেতৃত্বের বয়সসীমা কত থাকছে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। সংগঠনটির গঠনতন্ত্রের ৫-এর ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৭ থাকলেও ২৮ বছর ৩৬৪ দিনের মধ্যে নেতৃত্ব বাছাই করা হয়। আগামী সম্মেলনে তা বাড়িয়ে ২৯ বছর ৩৬৪ দিন করা হতে পারে বলে দায়িত্বশীল কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।

ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সম্মেলনে অনূর্ধ্ব ২৯ বছর বয়সী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর দুজনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তখন ওই কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তাদের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়া হয়।

জানা গেছে, আগামী বছর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিবেচনায় নিয়ে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বেশ সতর্ক। ক্লিন ইমেজ, নেতৃত্বদানে পরিপক্বতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতার বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছেন তারা। এছাড়া নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বয়সসীমা আরও এক বছর বাড়তে পারে। নির্ধারিত সময়ের আড়াই বছর পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে বয়স বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।

ছাত্রলীগের নেতৃত্বের বয়সসীমা বাড়ানোর ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বয়সসীমা কত হবে এই বিষয়টি আমাদের নেত্রীর চিন্তার মধ্যে আছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। উনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, ক্লিন ইমেজ, শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং আওয়ামী পরিবারের এমন নেতাই বেছে নেওয়া হবে।

বহুল কাক্সিক্ষত সম্মেলনকে সামনে রেখে ব্যাপক তোড়জোড় চালাচ্ছেন পদপ্রার্থীরা। ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চার শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলকে কেন্দ্র করে তাদের তোড়জোড় চলছে। এছাড়া, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই রাজনীতির আঁতুড়ঘর খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, টিএসসিসহ বিভিন্ন জায়গায় কর্মীদের নিয়ে সরব আছেন শীর্ষ পদপ্রার্থীরা। তারা জানান দিচ্ছেন নিজেদের প্রার্থিতার খবর।

এদিকে, ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সে সময় বিএনপির হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ফলে দেশজুড়ে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কমিটি করতে গিয়েও কর্মী সংকটে পড়তে হয়।

এখন ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী অনেকেই সে সময় পদ নিতে চাননি। ওই সময় অধিকাংশ আবাসিক হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা যায়নি। নির্বাচনের আগে ১৮টি হলের মধ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, কবি জসীম উদ্দীন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, অমর একুশে হল ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়েছিল। বাকি হলগুলোতে নেতাকর্মী সংকটে কমিটি দেওয়া যায়নি।

ওই সময় ছাত্রলীগে সক্রিয় থাকা বেশ কয়েকজন নেতা এবার দলের শীর্ষ নেতৃত্বে আসার আলোচনায় আছেন। এদের মধ্যে আছেন ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন (জসীম উদ্দীন হল), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান (মুহসীন হল), তাহসান আহমেদ রাসেল (এস এম হল), মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস (এস এম হল), আইন সম্পাদক ফুয়াদ হাসান শাহাদাত (এস এম হল), উপ-আইন সম্পাদক শাহেদ খান (জসীম উদ্দীন হল), উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক এহসান উল্লাহ পিয়াল (একুশে হল), সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ইনান (এফ রহমান হল), খাদিমুল বাশার জয় (এফ রহমান হল) ও সবুর খান কলিন্স (এফএইচ হল)।

শীর্ষ পদে আলোচনায় যারা: ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সারা দেশকে সাতটি অঞ্চল হিসাব করা হয়। অঞ্চলগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল। বিগত সম্মেলনগুলোতেও বিভাগভিত্তিক নেতৃত্ব নির্বাচন করা করা হতো।

এবারের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ পদগুলোতে চট্টগ্রাম থেকে আলোচনায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সলিমুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল; সাংগঠনিক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী; শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক এবং জিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন; সমাজসেবা বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর সাবেক সদস্য তানভীর হাসান সৈকত; সাহিত্য বিষয়ক উপ-সম্পাদক জয়জিৎ দত্ত।

উত্তরবঙ্গ থেকে আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন; কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক সদস্য রাকিবুল হাসান রাকিব; গ্রন্থনা-প্রকাশনা সম্পাদক আবুল হাসনাত হিমেল; পরিবেশ বিষয়ক উপ-সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ সোহাগ।

বরিশাল অঞ্চল থেকে সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন; সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ ইনান; কর্মসংস্থান বিষয়ক উপ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়; বিজ্ঞান বিষয়ক উপ-সম্পাদক সবুর খান কলিন্স।

বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল থেকে আইন সম্পাদক ও বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, কবি জসীম উদ্দীন হল শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান; সহ-সভাপতি রাকিব হোসেন; যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান।

ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক মেহেদি হাসান তাপস। খুলনা অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধন ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন।

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে রয়েছেন জিয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হাসান শান্ত; মুহসিন হল ছাত্রলীগের সভাপতি শহিদুল হক শিশির; শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক-উপ সম্পাদক মেশকাত হোসেন।