দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসাায়ন খাতের কোম্পানি এমবি ফার্মাসটিউক্যালস পিএলসি নিয়ম বহির্ভূতভাবে নগদের চেয়ে দ্বিগুণ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। যা আয়কর অধ্যাদেশ (১৬ নম্বর) ২০১৯ এর লঙ্ঘন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আইন অনুসারে, পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানিকে স্টক ডিভিডেন্ডের কমপক্ষে সমপরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে হবে। যদি স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার পরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের চেয়ে বেশি হয় তাহলে যে পরিমাণ স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়া হবে বা হয়েছে তার পুরোটার ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। এ কর কোম্পানিকে সংশ্লিষ্ট কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের আগে পরিশোধ করতে হবে। এটি অন্য কোনো করের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে না।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সেই আইন লঙ্ঘন করে জুলাই ২০২১ থেকে ৩০ জুন, ২০২২ সমাপ্ত বছরের সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিয়ম ভঙ্গের দায়ে কোম্পানিকে শাস্তি হিসেবে বোনাস শেয়ারের ১০ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হবে।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ২ কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করার লক্ষ্যে এমবি ফার্মা শেয়ারহোল্ডারদের নগদের চেয়ে দ্বিগুণ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে। এই বোনাস শেয়ার লভ্যাংশের ফলে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি পাবে। তবে ৩০ শতাংশের নির্দেশনা পরিপালন হবে না।

কোম্পানির তথ্য মতে, ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে এমবি ফার্মার শেয়ার কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৮০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। তাতে কোম্পানির ২৪ লাখ শেয়ারধারীদের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৩৬ পয়সা। সেখান থেকে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ (১ টাকা করে) আর ২০ শতাংশ বোনাস (২ টাকা সমপরিমাণ শেয়ার) লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগের বছর শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছিল ৫ টাকা ৪২ পয়সা। ওই বছর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। তবে তার আগের বছর ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ১ টাকা ৫০ পয়সা করে লভ্যাংশ দিয়েছিল।

এ বিষয়ে এমবি ফার্মার কোম্পানি সচিব হাসানুল কবির বলেন, বিদায়ী বছরে কোম্পানির মুনাফা অনেক বেড়েছে। তাই কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ আর বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছে। পর্ষদ সভায় বোনাস লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য কোম্পানির বার্ষিক সভার (এজিএম) দিন নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। বিনিয়োগকারীরা ইচ্ছে করলে সে দিন বোনাস লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

নগদের চেয়ে বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ ঘোষণার কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে কোম্পানি সচিব বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনাকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্ষদ। নিয়ন্ত্রক সংস্থা চলতি বছরের মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে বলেছে।

বিএসইসির সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য এ বছর নগদের চেয়ে বেশি বোনাস শেয়ার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তারপরও ৩০ কোটি হবে না। এজন্য আমাদের আরও সময় লাগবে। এই শর্ত মানতে গিয়ে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী অতিরিক্ত কর দিতে হবে। এই শাস্তি মওকুফের জন্য আমরা আবেদন করব।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, কী কারণে কোম্পানিটি এত পরিমাণ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিচ্ছে তা বিএসইসিকে খতিয়ে দেখা উচিত। যৌক্তিক কারণ না থাকলে বোনাস শেয়ারের প্রস্তাব বাতিল করা উচিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আইন অনুযায়ী কোম্পানির মোট মুনাফার ন্যূনতম ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হয়। অন্য একটি আইনে বলা হয়েছে, নগদ ও বোনাসের সমপরিমাণ লভ্যাংশ দিতে হয়। এর ব্যত্যয় হলে আইন অনুযায়ী যে শাস্তি রয়েছে তা ভোগ করতে হবে।

তিনি বলেন, কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভায় লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন এজিএমে পাস হলে এই প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কমিশনে আবেদন করবে। কোম্পানি যদি যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারে তবে বিএসইসি প্রস্তাব বিবেচনা করবে। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে বোনাস লভ্যাংশের বিষয়টি কমিশন বাতিল করতে পারে।

এদিকে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, কোম্পানির মোট ঋণ রয়েছে ১১ কোটি ৫৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার বুধবার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৪৯৯ টাকা ৯০ পয়সায়। তাতে কোম্পানি ২৪ লাখ শেয়ারের বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ১১৬ কোটি কোটি ৭৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

১৯৮৬ ওষুধ খাতে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানিটি ২০২০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৭৭ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে শেয়ার রয়েছে ১৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ।