দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন চলতি বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে রোববার ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩১৩ কোটি টাকা। এটি চলতি বছরের মধ্যে তো বটেই, গত ২০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ৫ মে ডিএসইতে সর্বনিম্ন ২৩৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে এখন চরম ক্রেতা সংকট বিরাজ করছে। নতুন কোনো বিনিয়োগ আসছে না। পুরোনো বিনিয়োগকারীরাও সুযোগ পেলে টাকা তুলে নিচ্ছেন। আবার যাঁরা ঋণ করে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের ঋণের অর্থ আদায়ে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু কিছু শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেল করছে। সব মিলিয়ে তাই পুঁজিবাজারে ক্রেতাসংকট দেখা দিয়েছে।

মুলত পুঁজিবাজারে এখন ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশি। তবে বেশির ভাগ শেয়ার নিয়ন্ত্রণ সংস্থার বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দাম বা ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় বিক্রির চাপ কম। কারণ, ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা বেশির ভাগ শেয়ারেরই কোনো লেনদেন হচ্ছে না। ফলে পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে গত জুলাইয়ে শেয়ারের দামের ওপর সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এখন বাজারে মন্দাভাব চলতে থাকায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার বিষয়টিও চিন্তা করা হচ্ছে না। কারণ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা মনে করে, এ অবস্থায় ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হলে তাতে বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এদিকে লেনদেন কমে যাওয়ার জন্য ফ্লোর প্রাইসকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞ ও বাজার–সংশ্লিষ্টদের অনেকে। তাঁরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে ভালো মৌলভিত্তির অনেক শেয়ারেরও লেনদেন বন্ধ হয়ে আছে। এতে লেনদেনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এদিকে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে বড় দরপতনের মধ্যদিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। শেয়ার বিক্রির চাপে এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ২০ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচক কমেছে ২৫ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেন ও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

ডিএসইর তথ্য মতে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০.৮১ পয়েন্ট বা ০.৩৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২২৪.৫৬ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৬.৭১ পয়েন্ট বা ০.৪৮ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৯.১১ পয়েন্ট বা ০.৪১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৬৩.৬০ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ২০৭.০১ পয়েন্টে।

ডিএসইতে ৩১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে আজকের লেনদেন ৪২০ দিন বা এক বছর ৭ মাস ২৯ কার্যদিবসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগের ডিএসইতে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল আজকের চেয়ে কম লেনদেন হয়েছিল। ওই দিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ২৩৬ কোটি টাকার। ডিএসইতে ৩০০ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২২টির বা ৭.৩৩ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ৬৪টির বা ২১.৩৩ শতাংশের এবং ২১৪টির বা ৭১.৩৩ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৫.৬৬ পয়েন্ট বা ০.১৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৯৩.৯৬ পয়েন্টে। সিএসইতে আজ ১৩৮টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১টির দর বেড়েছে, কমেছে ৩৫টির আর ৮২টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৬ কোটি ০৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।