BBS20170520151940দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: অস্বাভাবিকহারে বেড়েই চলছে সদ্য তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিবিএস কেবলস লিমিটেডের শেয়ারদর। ১০ টাকা দরে অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুতে পুঁজিবাজারে আসা প্রকৌশল খাতের এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি দর মাত্র ১১ কার্যদিবসে সাড়ে ১২ গুণেরও বেশি বেড়েছে। শতাংশ হিসেবে আলোচ্য সময়ে শেয়ারটির দর বেড়েছে ১ হাজার ১৬৫ শতাংশ। আর এই দরবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, আইপিও প্রক্রিয়া শেষে গত ৩১ জুলাই থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় কোম্পানিটির। প্রথম দিনেই নয়গুণ মুনাফা দিয়ে বিনিয়োগকারীদের তাক লাগিয়ে দেয় বিবিএস কেবলস। ১০ টাকা অভিহিত দরের এই শেয়ারটির ওইদিন সমাপনী দর ছিল ৯০ টাকা।

সেই হিসাবে গত মে মাসের শেষে দিকে বিনিয়োগ করে দু’মাসেই মুনাফাসহ ফেরত পেয়েছেন নয়গুণ অর্থ। আর ৩১ জুলাই থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১১ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর বেড়েছে সাড়ে ১২ গুণেরও বেশি।

জানা গেছে, লেনদেন শুরু হওয়ার পর থেকেই দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে কোম্পানিটি। প্রথম দিন অর্থাৎ ৩১ জুলাই শেয়ারটির সমাপনী দর ছিল ৯০.৩০ টাকা। পরবর্তী ১০ কার্যদিবসে শেয়ারদর মাত্র দুই কার্যদিবস কমলেও বাকী ৮ কার্যদিবসই বেড়েছে। এই দরবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক মনে করে ৭ আগস্ট বিবিএস ক্যাবলস কর্তৃপক্ষকে শোকজ করে ডিএসই।

এর জবাবে ৮ আগস্ট কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির মতো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল কোনো তথ্য কোম্পানির কাছে নেই। অর্থাৎ কারণ ছাড়াই বাড়ছে কোম্পানির শেয়ারদর।

সর্বশেষ কার্যদিবসের আজ লেনদেনে শেয়ারটির দর দাঁড়িয়েছে ১২৬.৫০ টাকায়। এদিন শেয়ারদির দর বেড়েছে ১০ শতাংশ বা ১১.৫০ টাকা। দিনভর ১১৫.১০ টাকা থেকে ১২৬.৫০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করলেও সর্বশেষ শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ১২৬.৫০ টাকা দরে, যার সমাপনী দরও ছিল ১২৬.৫০ টাকা।

ডিএসইতে দরবৃদ্ধির দিক থেকে এদিন শীর্ষে ছিল কোম্পানিটি। একই সঙ্গে ৩৭ কোটি ৩৯ লাখ ২৯ হাজার টাকার শেয়ার কেনাবেচা হওয়ায় লেনদেনেরও শীর্ষে অবস্থান করে বিবিএস ক্যাবলস। এর আগেও অধিকাংশ কার্যদিবসেই কোম্পানিটি ঘুরেফিরে দরবৃদ্ধির শীর্ষ অবস্থানে ছিল।

‘এন’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানির ত্রৈমাসিকের অনিরীক্ষিত হিসাব পর্যালোচনা করে দেখো গেছে, তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ’ ১৭) কর পরবর্তী মুনাফা করেছে ৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এসময়ে আইপিও পূর্ববর্তী শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.৮৬ টাকা।

আর আইপিও পরবর্তী শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.৭২ টাকা। এদিকে অর্থবছরের মোট ৯ মাসে (জুলাই’ ১৬-মার্চ’ ১৭) কোম্পানিটির কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ২৩ কোটি ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আইপিও পরবর্তী ইপিএস হয়েছে ১.৯৫ টাকা। ৩১ মার্চ ২০১৭ তারিখে শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য বা এনএভিপিএস হয়েছে ১৯.২১ টাকা।

এদিকে শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস এবং শেয়ারের বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এর মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ৪০.৫৪ (বেসিক)। সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত ইপিএস অনুযায়ী যা ৬১.৭১। ফলে কোম্পানির আয়ের সঙ্গে শেয়ারের বাজারদরের কোনো সংগতি পাচ্ছেন না বাজার বিশ্লেষকেরা।

বিশ্লেষকদের মতে, কোনো কোম্পানির পিই রেশিও ১৫ থেকে ২০ অনেকটা নিরাপদ। অন্যদিকে ৪০ পর্যন্ত পিই রেশিও নিরাপদ মনে করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সেই হিসেবে বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই কোম্পানি।

উল্লেখ্য, বিবিএস ক্যাবলস ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ২ কোটি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। উত্তোলিত এই অর্থ প্লান্ট ও মেশিনারিজ ক্রয়, বিল্ডিং নির্মাণ, ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও’র খরচ বাবদ ব্যবহার করা হবে। বিএসইসি’র ৬০১তম কমিশন সভায় বিবিএস ক্যাবলসের আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়।