tex and engineerদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতে কোম্পানিগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পরিমাণ দিন দিন কমেছে। অধিকাংশ কোম্পানিগুলোর এক বছরের বিনিয়োগের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্তি ৪৮ টি কোম্পানির মধ্যে ৪৭ টি কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জুন’ ২০১৬ থেকে ২৯ জুন’ ২০১৭ এই মেয়াদে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ২৪ টি কোম্পানিতে। আর বেড়েছে ২১ টি কোম্পানিতে।

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অধিকাংশ সময় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ এবং বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ দেখে কোম্পানিগুলোয় বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেন বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা আরো মনে করেন, সচেতন বিনিয়োগকারীরাই বাজারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা রাখেন। অন্যদিকে গত এক মাসের ব্যবধানে বস্ত্র খাতের শেয়ার লেনদেন অনেকটা পিছিয়ে গেছে। তবে প্রকৌশল খাতের শেয়ার লেনদেন এগিয়ে রয়েছে। বস্ত্র খাতের শেয়ারে আগ্রহের ভাটা থাকলেও প্রকৌশলী খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর জুনে হিসাব বছর শেষ হবে। সে হিসেবে এসব কোম্পানির লভ্যাংশের মৌসুম আসছে। তাই আগের চেয়ে এসব কোম্পানির শেয়ারদর বেশি। এসব কোম্পানির শেয়ারে আগের চেয়ে আগ্রহ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। এতে এসব খাতের লেনদেনে অবস্থানও শক্তিশালী হচ্ছে। তবে আগের চেয়ে বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং খাতের লেনদেনের হার কমেছে। এ খাতের কোম্পানি থেকে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতায় এমনটি হয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বস্ত্র খাতের শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কমে যাওয়ার পেছনে দুইটি ইস্যু কাজ করে। একটি হলো বস্ত্র খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দর আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। অন্যটি হলো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর আগ্রহ কমেছে।

অন্যদিকে প্রকৌশলী খাতের শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাড়ছে। প্রকৌশলী খাতের ৩৪ টি কোম্পানির মধ্যে ৩০ জুন’ ২০১৬ থেকে ২৯ জুন’ ২০১৭ এই মেয়াদে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ১২ টি কোম্পানিতে।

আর বেড়েছে ১৯ টি কোম্পানিতে। গত বছরের তুলনায় সমান সমান দুইটিতে। এছাড়া একটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নেই। এর মধ্যে বিদেশী বিনিয়োগকারী বাড়ছে ৬টিতে আর কমেছে ৪টিতে। আগের বছরের তুলনায় সমান সমান দুইটিতে। এর মধ্যে ২২টি কোম্পানিতে বিদেশী বিনিয়োগকারী নেই।

প্রকৌশলী খাতের শেয়ারে মুনাফা বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের চাপ বেড়েছে। যেহেতু প্রকৌশলী খাতের কোম্পানিগুলো ভাল লাভ করেছে এবার শেয়ারহোল্ডারদের ভাল ডিভিডেন্ড দেবে। গত ছয় মাস ধরে প্রকৌশলী খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বাড়ছে। গত সপ্তাহে লেনদেনে হঠাৎ চমক দেখিয়েছে এ খাতটি। এছাড়া আর্থিক বছর সম্পন্ন হওয়ায় ডিভিডেন্ড ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে প্রকৌশল খাতের তালিকাভুক্ত ৩৪ কোম্পানি। এর মধ্যে তিন কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষনা করেছে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজারে স্মরনকালের দরপতনে একেবারে তলানিতে নেমে এসেছিল প্রকৌশলী খাতের কিছু শেয়ার। ফলে ঘুরে দাঁড়ানোর অন্তর্নিহিত শক্তি সঞ্চিত হচ্ছিল এ খাতের শেয়ারে। অন্যদিকে সরকার পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করছেন। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা প্রকৌশলী খাতের শেয়ারে বিনিয়োগ শুরু করছেন।

সম্প্রতি প্রকৌশলী খাতের তিন কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষনা করেছে। বিএসআরএম ও বিএসআরএম স্টিল এবং রতনপুর স্টিলের ভাল ডিভিডেন্ড আসায়ও আগ্রহ বাড়ছে। এর মধ্যে সরকারের মেগা প্রকল্পে রড সরবরাহের কারণে ব্যবসা প্রবৃদ্ধিতে চমক দেখিয়েছে রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম) লিমিটেড।

পাশাপাশি গুণগত মানের কারণে পণ্যের চাহিদা বাড়ায় সর্বশেষ হিসাব বছরে আগের বছরের তুলনায় নিট বিক্রি ৩৯ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে কোম্পানিটির। বিক্রি প্রবৃদ্ধির তুলনায় পরিচালন ব্যয় কম হওয়ায় কর-পরবর্তী মুনাফা ১৬০ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেড়েছে আরএসআরএমের।

অন্যদিকে গত ১৩ আগষ্ঠ বিএসআরএম লিমিটেড এবং বিএসআরএম স্টিল ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে বিএসআরএম লিমিটেড পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর আগে ১০ শতাংশ অন্তবর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৮৮ পয়সা। এছাড়া বিএসআরএম স্টিল পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর আগে ২০ শতাংশ অন্তবর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪ টাকা ৯৮ পয়সা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পিই রেশিওর দিক দিয়েও ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগনির্ভর পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে বেশ কিছুদিন দর বাড়ার পর বিনিয়োগকারীরা কিছুটা মুনাফা তুলে নেওয়ায় এ খাতের শেয়ারে লেনদেনে হার কমেছে।

আসলে বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা হুজুগে বিনিয়োগ করেন। তারা মৌলভিত্তি শেয়ারে বিনিয়োগ কম করেন। স্বল্প সময়ে বেশি মুনাফা করতে চান বিনিয়োগকারীরা। আর এ কারণে মাঝেমধ্যে তারা বিনিয়োগ কৌশল পরিবর্তন করেন। যখন যে খাতে আগ্রহ বাড়ে, সেসব কোম্পানির শেয়ারের লেনদেনের হার বাড়ে।

রতনপুর স্টিল কোম্পানির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের পাশাপাশি সরকারি কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় দেড় বছর ধরে রড সরবরাহ করছে আরএসআরএম গ্রæপ। এর বাইরে বহুতল ভবন নির্মাণে কোম্পানির মূল পণ্য ৬০ গ্রেডের এমএস রডের চাহিদা বাড়ায় সর্বশেষ হিসাব বছরে ব্যবসায় ভালো সফলতা পেয়েছে রতনপুর স্টিল।

এর বাইরে গুণগত মানের কারণে কাটপিস রড ও মিসরোলের বিক্রিও আগের বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি পরিচালন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য আর্থিক খরচ তুলনামূলক কমিয়ে আনায় বছর শেষে ভালো মুনাফা করেছে আরএসআরএম লিমিটেড। তথ্যমতে, বাজারে মোট লেনদেনের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি। গত সপ্তাহে মোট লেনদেনের ১০ শতাংশ ছিল এ খাতের দখলে।

সপ্তাহের শেষদিন বৃহস্পতিবার খাতটির দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৮ কোটি টাকা। তবে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাতের অবস্থান। গত সপ্তাহে মোট লেনদেনের মধ্যে ২৩ শতাংশই ছিল প্রকৌশল খাতের দখলে। খাতটির দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ১৮৪ কোটি টাকা। আর লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকিং এবং তৃতীয় অবস্থানে ওষুধ ও রসায়ন খাত।

এক মাস আগে গত ২০ জুলাই মোট লেনদেনের ১৫ শতাংশ ছিল বস্ত্র খাতের। পাশাপাশি অবস্থান ছিল প্রকৌশল খাতও। অর্থাৎ যৌথভাবে বস্ত্র ও প্রকৌশল খাত লেনদেনে প্রথম অবস্থানে ছিল। আর লেনদেনের ১৩ শতাংশ অংশগ্রহণের মাধ্যমে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল জ্বালানি এবং ১২ শতাংশ অংশগ্রহণে তৃতীয় অবস্থানে ব্যাংকিং খাত।

আলোচিত সময়ে বস্ত্র খাতের দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ১৫১ কোটি টাকা এবং প্রকৌশল খাতের ১৪৯ কোটি টাকা। মাঝে বেশ কয়েকবার ব্যাংকিং খাত প্রথম অবস্থানে থাকলেও ফের শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে প্রকৌশল খাতের লেনদেন।

এদিকে পিই রেশিওর দিক দিয়ে ব্যাংকিং খাতের পিই রেশিও ৯ দশমিক আট পয়েন্টে এবং প্রকৌশল খাতের পিই রেশিও ২৬ দশমিক পাঁচ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এছাড়া বস্ত্র খাতের পিই রেশিও ২৪ দশমিক শূন্য পয়েন্টে এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের ১৯ দশমিক দুই পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এক মাস আগে ব্যাংকিং খাতের পিই রেশিও ছিল ৯ দশমিক এক পয়েন্টে, বস্ত্র খাতের পিই রেশিও ছিল ২৫ দশমিক ৫ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতের ২৩ দশমিক দুই পয়েন্টে এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের পিই রেশিও ১৯ দশমিক তিন পয়েন্টে অবস্থান করেছিল।