gphousebg20160802102547আলমগীর হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের বেশকিছু শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার তথ্য খুঁজে পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাছাড়া শীর্ষ অনেক প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট পরিশোধের হার কমে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম ভ্যাট পরিশোধ করছে। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের অজ্ঞতার কারণে ভ্যাট কমে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বেড়েছে, কিন্তু সঠিকভাবে ভ্যাট দিচ্ছে না।

এরই মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিকম খাতের কোম্পানি গ্রামীনফোনের কাছে পাওনা ১ হাজার ৪০২ কোটি কোটি টাকা বকেয়া ভ্যাট আদায়ে তৎপর হচ্ছে এনবিআর। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই আইনি প্রক্রিয়ার অজুহাতে বকেয়া ভ্যাট দিতে গড়িমসি করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। সর্বশেষ তাদেরকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) অফার দিলেও তারা ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের অর্থ ফেরত দিচ্ছে না।

সূত্রমতে, দুই দফায় তদন্ত করে কোম্পানিটির কাছে এই পরিমাণ অর্থ ফাঁকি উদঘাটিত হয়। মোবাইল ফোনের সিম হারিয়ে গেলে, চুরি কিংবা নষ্ট হয়ে গেলে একই গ্রাহকের জন্য ওই সিম পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।

এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের উপর নতুন করে বাড়তি ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ ছিল না। কিন্তু নতুন করে সিম কিনতে গেলে গ্রাহককে সরকার প্রযোজ্য ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হয়। বর্তমানে এই কর প্রতি সিমে ১০০ টাকা হলেও আলোচ্য সময়ে তা যথাক্রমে ৫৫৪ থেকে ১৮১ টাকা পর্যন্ত ছিল। এনবিআরের অভিযোগ, গ্রামীনফোন কোম্পানি নতুন সিম বিক্রি করে ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য এটিকে সিম পরিবর্তন বা রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে দেখিয়েছে।

page 1এনবিআরের অভিযোগ গ্রামীণফোন ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মোবাইল ফোন সিম বিক্রিকে (নতুন সংযোগ) সিম পরিবর্তন হিসেবে দেখিয়ে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ফাঁকি দেওয়া অর্থ পরিশোধের জন্য চ‚ড়ান্ত দাবিনামা জারি করলেও তা পরিশোধ করেনি তারা। এর আগে ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের একইভাবে সিম পরিবর্তনের ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে এনবিআর। বহুল আলোচিত ওই ইস্যুটি হাইকোর্ট ঘুরে বর্তমানে এনবিআরের ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এই প্রক্রিয়ায় দুই দফায় উদঘাটিত ভ্যাট ফাঁকির শীর্ষে থাকা গ্রামীণ ফোনের বকেয়া ১৪০২ কোটি টাকা রয়েছে। এর বাইরে কয়েকটি মোবাইল ফোন কোম্পানির আয়কর ও শুল্ক বিষয়েও মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে।

এ রকম বেশকিছু বিরোধ বর্তমানে এনবিআরের আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ছাড়াও আদালতে বিচারাধীন। আরো ফাঁকি বের করতে বিশেষায়িত তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। অন্য কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও একই ধরনের তদন্ত কাজ চলবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন উপায়ে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগও রয়েছে গ্রামীণ ফোনসহ মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে।

এর বাইরে স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে রেয়াত নেওয়া ছাড়াও অন্যান্য উপায়ে বেশকিছু রেয়াতকে অবৈধ হিসেবে দেখছে এনবিআরের আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট বা এলটিইউ-ভ্যাট বিভাগ। এসব দাবির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো উচ্চ আদালত কিংবা এনবিআরের ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে আপিল করেছে।

কিন্তু বিশাল অঙ্কের এসব অর্থ দ্রæত আদায়ে এনবিআর স¤প্রতি নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ এবং মামলায় আটকে থাকা রাজস্ব দ্রæত উদ্ধারে কোম্পানিগুলোকে আদালতের বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে (এডিআর) আসার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া স¤প্রতি প্রাক বাজেট আলোচনায় মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা বকেয়া রাজস্ব দিয়ে দিন।’

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এডিআরের বিষয়ে এনবিআর আগ্রহ দেখালেও মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। একটি মোবাইল ফোন কোম্পানি স্বল্প পরিমাণে একটি ভ্যাটের দাবির বিষয়ে এডিআরে আসার জন্য আবেদন করলেও বাদবাকিদের এখনো এ বিষয়ে আগ্রহ দেখা যায়নি।