দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: এক সময় পুঁজিবাজারের প্রাণ বলা হতো মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে। পুঁজিবাজার যখন খুব বেশি ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় পৌঁছাবে তখন মিউচুয়াল ফান্ডগুলো থেকে শেয়ার বিক্রি করে বাজারে শেয়ারের সরবরাহ বাড়াবে। আর বাজার যখন মন্দা থাকবে তখন মিউচুয়াল ফান্ডগুলো শেয়ার ক্রয় করে বাজারকে ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় নিয়ে যাবে। পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের এমন আচরণ অব্যাহত থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে এসব ফান্ড একেবারে অকার্যকর।

বাজার থেকে বেশি দামে শেয়ার কিনে এখন তা আর সমন্বয় করতে পারছে না ফান্ড ম্যানেজাররা। ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৮টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে অধিকাংশ অভিহিত মূল্য ১০ টাকার নিচে। বিশেষ করে আইসিবি’র মিউচুয়াল ফান্ড গুলো বেশি অবমুল্যায়িত।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ২০১০ সালের পর থেকে মিউচুয়াল ফান্ডের দুর্দিন চলছে। সেই সময়ে থেকে মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা মুনাফা শূন্য। নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হলেও তার কোনো সুফল নেই বাজারে।

দীর্ঘদিন ধরেই দেশের শেয়ারবাজারে বেহাল দশায় রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড। দিনের পর দিন ধুঁকতে থাকা বেশ কয়েকট মিউচুয়াল ফান্ড হঠাৎ করেই দাম বাড়ার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত দাপট দেখাচ্ছে। তবে আইসিবি’র ৯ ফান্ডের ডিএসই ডিভিডেন্ড নিয়ে তথ্য বিভ্রান্তি রয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত পড়ছেন।

আইসিবি’র ৯ ফান্ডের ২০১৮ সালে ডিভিডেন্ড দিলেও ডিএসই ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশ করেনি। ফলে ডিভিডেন্ড নিয়ে তথ্য বিভ্রান্ত পড়ছেন। তবে ডিএসই ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালে ডিভিডেন্ড প্রকাশ করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন আইসিবি’র ৯ ফান্ডের ডিভিডেন্ড ঘোষণা করলেও কেন ডিএসই তথ্য প্রকাশ করেনি। ডিএসই এ ধরনের কর্মকান্ডে শেয়ারহোল্ডরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৯ মিউচ্যুয়াল ফান্ড। ফান্ডগুলো হলো: আইসিবি এমসিএল সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইএফআইসি ইসলামী মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান, আইসিবি এমসিএল থার্ড এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড,

প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট আইসিবি এমসিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এমপ্লয়ীজ প্রফিডেট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান: স্ত্রিম ওয়ান, আইসিবি এমসিএল সেকেন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড, প্রাইম ওয়ান আইসিবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডগুলো হলো পুঁজিবাজারের প্রাণ। বাজারের ক্রান্তিকালে এই মিউচুয়াল ফান্ডগুলো এবং আইসিবি সাপোর্ট দিয়ে থাকে। বাইরের দেশের পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যারা পুঁজিবাজার ভালভাবে যাচাই-বাছাই করে বিনিয়োগ করতে পারেন না তারা সাধারণত মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেন। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিরাপদে থাকে।

কিন্তু আমাদের দেশে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। একদিকে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো বিনিয়োগকারীদের ভাল মুনাফা দিতে পারছে না, অন্যদিকে বাজার সাপোর্টের ক্ষেত্রেও কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না।

ফান্ডগুলোর এমন অবস্থা সম্পর্কে ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টম্যান্টের সহকারী পরিচালক দেবব্রত কুমার সরকার জানান, ফান্ড ম্যানেজাররা বাজারের সবচেয়ে দক্ষ ব্যক্তি হয়ে থাকে। কখন কোন কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ে লাভবান হওয়া যাবে তা থাকে তাদের নখদর্পণে।

কিন্তু বর্তমান মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর অবস্থা দেখে সহজেই বলা চলে, ফান্ড ম্যানেজাররা দক্ষতার পরিচয় দেননি। কারণ মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর এনএবি’র তুলনায় শেয়ারের বাজার মূল্য অনেক কম। এমন অবস্থায় শেয়ার বিক্রি করে দেয়া হলে ফান্ডের লোকসান হবে।