পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে আসছে দেশের শীর্ষ ৬ কোম্পানি
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে আসছে দেশের প্রতিষ্ঠিত ৬ কোম্পানি। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার ইস্যু বিক্রি করতে আসছে কোম্পানিগুলো। কোম্পানিগুলোর মধ্যে কয়েকটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক ইতোমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে। কয়েকটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ার আসলে বাজারের জন্য যেমন ইতিবাচক, তেমনি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বাছাইয়ের পরিধি আরো বিস্তৃত হবে।
পুঁজিবাজারে আমান গ্রুপের লুটপাট!
পুঁজিবাজার ও আবাসনে কালো টাকা বিনিয়োগের নিয়ম
কোম্পানিগুলো মধ্যে বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বন্টনের প্রক্রিয়ায় থাকা ওয়ালটন, বিডিংয়ের অনুমোদন পাওয়া এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন, মীর আকতার হোসেন ও লুব-রেফ বাংলাদেশ এবং অনুমোদনের প্রকিয়ায় থাকা রবি আজিয়াটা ও ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড। কোম্পানিগুলো বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে প্রায় এক হাজার তিনশত কোটি টাকা উত্তোলন করবে।
ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড : দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স কোম্পানি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে এরই মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির জন্য আইপিও সাবস্ক্রিপশন সম্পন্ন করেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ডিজিটাল প্লাটফর্মে কোম্পানিটির আইপিও লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর স্টক এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন সাপেক্ষে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হবে। ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলনের জন্য বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি সাধারণ শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে ইস্যু করবে। এর মধ্যে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৬৭টি শেয়ার যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে তাদের নিজেদের বিডিংকৃত মূল্যে ইস্যু করা হবে।
যোগ্য বিনিয়োগকারীরা বিডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ারের কাট অফ প্রাইস ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করেছেন। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৬টি শেয়ার কাট অফ প্রাইসের ২০ শতাংশ কমে অর্থাৎ ২৫২ টাকায় ইস্যু করা হবে। এ বছরের ৭ জানুয়ারি বিএসইসির ৭১৪তম কমিশন সভায় কোম্পানিটির আইপিও বিডিং অনুমোদিত হয়। আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত ১০০ কোটি টাকার মধ্যে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকায় বিএমআরই, ৩৩ কোটি টাকা ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও সাড়ে ৪ কোটি টাকা আইপিও প্রক্রিয়ার খরচ নির্বাহে ব্যয় করা হবে।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতিসহ ওয়ালটন হাইটেকের শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ২৪৩.১৬ টাকা, পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতি ছাড়া যা ১৩৮.৫৩ টাকা। গত পাঁচ বছরে কর-পরবর্তী নিট মুনাফার ভারিত গড় হারে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২৮.৪২ টাকা।
এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড : বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া শুরুর অনুমোদন পেয়েছে এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড। সম্প্রতি বিএসইসির ৭৩৪তম কমিশন সভায় কোম্পানিটিকে ইলেকট্রনিক বিডিংয়ের মাধ্যমে প্রান্ত-সীমা মূল্য (কাট অফ প্রাইস) নির্ধারণের জন্য বিডিংয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করে এলপিজি ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও আইপিও প্রক্রিয়ার খরচ নির্বাহে ব্যয় করবে।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের সমন্বিত আর্থিক বিবরণী অনুসারে, পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতিসহ কোম্পানিটির এনএভিপিএস ৪৫.১৫ টাকা আর পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতি ছাড়া এনএভিপিএস ৩০.২০ টাকা। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩.১৩ টাকা। গত পাঁচ বছরের আর্থিক বিবরণী অনুসারে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফার ভারিত গড় হারে ইপিএস হয়েছে ২.২১ টাকা।
মীর আকতার হোসেন লিমিটেড : বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য বিএসইসির ৭৩৫তম কমিশন সভায় ইলেকট্রনিক বিডিংয়ের মাধ্যমে প্রান্ত-সীমা মূল্য নির্ধারণের জন্য বিডিংয়ের অনুমোদন পেয়েছে নির্মাণ খাতের প্রতিষ্ঠান মীর আকতার হোসেন লিমিটেড। আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে সংগৃহীত ১২৫ কোটি টাকার মূলধন দিয়ে কোম্পানিটি সরঞ্জামাদি ও যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহ করবে।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৬.৩২ টাকা। আর এ সময়ে পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতিসহ কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩৪.৭১ টাকা। পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতি ছাড়া যা ৩৩.৬৩ টাকা। গত পাঁচ বছরের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী মীর আকতারের কর-পরবর্তী নিট মুনাফার ভারিত গড় হারে ইপিএস হয়েছে ৬.২১ টাকা।
লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেড : সম্প্রতি বিএসইসির ৭৩৬তম কমিশন সভায় বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ইলেকট্রনিক বিডিংয়ের মাধ্যমে প্রান্ত-সীমা মূল্য নির্ধারণের অনুমোদন পেয়েছে লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেড। আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলন করে ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও আইপিওর খরচ খাতে ব্যয় করবে।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুসারে, পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতিসহ কোম্পানিটির এনএভিপিএস ৩১ টাকা ৯৩ পয়সা আর পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতি ছাড়া এনএভিপিএস ২৫ টাকা ৯৬ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৮ পয়সা। গত পাঁচ বছরের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফার ভারিত গড় হারে ইপিএস ২ টাকা ২৩ পয়সা। লুব-রেফের মূল ব্যবসা লুব্রিক্যান্ট উৎপাদন ও বিপণন। তাদের বাজারজাতকৃত লুব্রিক্যান্ট ব্র্যান্ড বিএনও। কোম্পানিটি বিদেশেও লুব্রিক্যান্টস রফতানি করে থাকে।
এছাড়াও টেলিকম খাতের বহুজাতিক কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেড এবং জ্বালানি খাতের কোম্পানি ওমেরা পেট্রোলিয়ামলিমিটেড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এরইমধ্যে পুঁজিবাজার থেকে ৫২৩ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রবির পক্ষ থেকে বেশ কিছু বিষয়ে ছাড় চেয়ে কমিশনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। কমিশন এগুলো যাচাই বাছাই করে দেখছে। কমিশনের পক্ষ থেকে দ্রতই রবির আইপিওর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
অন্যদিকে, জ্বালানি খাতের কোম্পানি ওমেরা পেট্রোলিয়াম পুঁজিবাজার থেকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ২৩৮ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহের জন্য আবেদন করেছিল। সম্প্রতি কমিশনের পক্ষ থেকে কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন বাড়িয়ে পুনরায় সংশোধিত আইপিও আবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।