নারী-পুরুষ মিলেই সমাজ। পুরুষ ছাড়া যেমন দুনিয়া চলে না- তেমনি নারী ছাড়াও না। কল্পনা করুন তো দুনিয়াতে একজনও নারী নেই শুধু পুরুষ আর পুরুষ, কেমন হবে ওই দুনিয়া? আবার একটা পুরুষও নেই পুরো পৃথিবীতে। কেবলই নারী, তাহলেই বা কেমন হবে? কেমন করে জন্ম নেবে পরবর্তী বংশধর?

মহান আল্লাহতায়ালা দুনিয়া সৃষ্টির আগেই তৈরি করলেন পুরুষ ও নারী। হজরত আদম (আ.) আর হজরত হাওয়া (আ.)। আর তাদের উভয়ই মানুষ। কেউ কারো প্রভু নয়। এক আল্লাহই তাদের প্রভু। তবে তাদের সৃষ্টি করে তাদের মধ্যে ভালোবাসা স্নেহ মায়া মমতা দিয়ে দিলেন। বন্ধুর মতো তারা পরস্পরে পথ চলা শুরু করল। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা গড়ে তুলল সুন্দর পরিবার, সমাজ ও সুন্দর পৃথিবী। এ প্রসঙ্গে সূরা আন নিসার ১ম আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানব জাতি! তোমাদের রবকে ভয় করো। তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি প্রাণ থেকে। আর সেই প্রাণ থেকেই সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া। তারপর তাদের দুজন থেকে সারা দুনিয়া ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী।’

আদম ও হাওয়া ছিলেন স্বামী-স্ত্রী। তাদের শারীরিক গঠন, মনন, মানসিক অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। নারী সন্তান ধারণ করে, জন্ম দেয়, দুধ পান করায় ও লালন পালন করে। নারীকে এর উপযোগী করেই সৃষ্টি করা হয়েছে। পুরুষ শত চেষ্টা করলেও এর উপযোগী হতে পারবে না। আবার পুরুষের যে শারীরিক গঠন বা যে যোগ্যতা নারী শত চেষ্টা করলেও পুরুষ হতে পারবে না। আল্লাহতায়ালার এ সৃষ্টির রদবদল অসম্ভব।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে নারী পুরুষের কর্মক্ষেত্র বা পেশা নিয়ে। এটা হলো মন মানসিকতার বিষয়। কোনো কাজ ছোট নয় বা অবহেলার নয়। একজন গৃহিণী বা মা সংসারে যে কাজ করেন তার মর্যাদা দিতে হবে। সে গৃহ ভৃত্য নয়। সে ঘরের মালিক। এটা তার দায়িত্ব। যদি এ দায়িত্ব সে পালন না করে তবে সংসার সমাজ অচল হয়ে যায়। পুরুষ বাইরে কাজ করে অর্থোপার্জন করে। এই অর্থ সে স্ত্রী সন্তান সংসারের জন্য খরচ করে। সংসারের এ কাজের যদি কেউ মূল্যায়ন না করে তবে সে মূর্খ। স্ত্রীকে যে তার জীবনে পথ চলার সাথী বানাতে পারে না সে চরম বোকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত। শান্তির সন্ধান পাওয়া তার জন্যে অসম্ভব।

কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের ক্ষেত্রে আওয়াজ শব্দ ব্যবহার করেছেন। যার অর্থ partner বা অংশীদার। অর্থাৎ একজন আর একজনের অংশীদার। স্ত্রী স্বামীর দাসী নয়। স্বামী স্ত্রীর প্রভু নয়। আসলে পারস্পরিক সম্পর্ক সুন্দর করতে চাইলে সুন্দর মন মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।

মানব সমাজ নারী পুরুষকে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সমাজ। নারী পুরুষ একে অপরের সহযোগী। আল্লাহর ভাষায় জোড়া বা অংশীদার। বর্তমান বিশ্বে মানব সমাজে অনেক অঘটন ঘটছে যা নারী পুরুষের পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের পরিবর্তে বৈরী বা প্রতিহিংসামূলক আচরণ থেকে। এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট্ট একটি হাদিস দিয়ে একটি বাস্তবসম্মত উপদেশ দিয়েছেন। সহিহ বোখারি ও মুসলিম শরিফে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নারীদের প্রতি উত্তম আচরণের চেষ্টা করবে। উত্তম নসিহতের মাধ্যমে উত্তম আচরণ কামনা করবে। কারণ নারীকে বাঁকা হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহর সৃষ্টি এই প্রকৃতিকে আপন গতিতে চলতে না দিয়ে এদিক ওদিক করতে গেলে সে প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে। যদি তুমি এটাকে সোজা করার চেষ্টা করো তাহলে ভেঙ্গে যেতে পারে বা তুমি ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তুমি তার মতো চলতে দাও তাহলে সব সময়ই তার এই বক্র অবস্থা চলতে থাকবে। অতএব নারীদের সঙ্গে উত্তম অচরণ করবে, উত্তম নসিহতের মাধ্যমে।’

এই হাদিসটির বাস্তব এবং স্বার্থক অনুসরণেই নারী পুরুষের মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি হতে পারে, অব্যাহতও থাকতে পারে। ঘৃণা বিভেদ সৃষ্টি করে কখনও সুসম্পর্ক তৈরি সম্ভব নয়। মানুষের সার্বিক উন্নতি অগ্রগতির জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ অপরিহার্য। এ পরিবেশের অভাবে শুধু পারিবারিক ও সামাজিক শান্তিই বিনষ্ট হয় না- ভবিষ্যৎ প্রজন্মও অন্যায় অশান্তির অতল তলে তলিয়ে যায়। আর এই পরিবেশ সৃষ্টির জন্য নারী পুরুষ উভয়েরই প্রয়োজন আল্লাহর প্রতি ঈমান, অবিচল আস্থা এবং সর্ব অবস্থায় আল্লাহর নির্দেশের অনুসরণ।