ষ্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আরোপিত নতুন বিধিনিষেধ স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে দায়ের করা রিট আবেদনটি ফিরিয়ে নিয়েছে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। গতকাল সোমবার আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় থাকলেও গ্রামীণফোনের আইনজীবীর করা আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এটি কার্যতালিকা (কজলিস্ট) থেকে বাদ দেয়।

রও পড়ুন…

ওয়ালটন হাইটেকের আইপিওতে আবেদন শুরু ৯ আগস্

তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতাধারী (এসএমপি) অপারেটর হিসেবে গ্রামীণফোনের ওপর দুটি ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে বিটিআরসি, যার বিরুদ্ধে গত ২৮ জুন গ্রামীণফোন হাইকোর্টে এ রিট আবেদন করে। তবে গ্রামীণফোনের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান সে সময় জানিয়েছিলেন, শুনানির জন্য তারা এখন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না এবং আলোচনার মাধ্যমে তারা সমাধানের আশা করছেন। বিটিআরসি গত ২১ জুন গ্রামীণফোনের ওপর দুটি বিধিনিষেধ জারি করে। তবে এ নিয়ে উভয়পক্ষের আলোচনার বিষয়টি সামনে আসায় ৩০ জুন রাতে এক বিবৃতিতে গ্রামীণফোন জানায় তারা রিট তুলে নেবে।

গতকাল বিটিআরসির আইনজীবী রেজা- ই-রাকিব বলেন, ‘আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ছিল। কিন্তু ওরা (গ্রামীণফোন) বলল যে এটি আর কন্টিনিউ করবে না। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। তারা রিটটি নন-প্রসিকিউশন করে বাদ দেওয়ার আবেদন জানায়। কিন্তু ভার্চুয়াল বেঞ্চ তো নন-প্রসিকিউশন করতে পারে না, তাই কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। এর ফলে মামলাটি শেষ হয়ে গেল। তবে বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে বিধিনিষেধ দিয়ে যে চিঠি দিয়েছিল সেটি বহাল আছে।’

বিটিআরসির জারি করা দুই বিধিনিষেধ গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর শুরু হয়েছে। এর ফলে গ্রামীণফোন এখন আগাম অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের নতুন সেবা, প্যাকেজ কিংবা অফার দিতে পারছে না। এখনকার প্যাকেজ কিংবা অফারও বিটিআরসির কাছে অনুমোদন করিয়ে নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলে গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে ‘লকিং পিরিয়ড’ ৬০ দিন। অন্যদের ক্ষেত্রে যা ৯০ দিন। এর মানে হলো গ্রামীণফোন সহজে ছাড়া যাবে। গত বছর ১০ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণফোনকে এসএমপি অপারেটর হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

কোনো মোবাইল অপারেটর গ্রাহকসংখ্যা, রাজস্ব অথবা তরঙ্গ এই তিন ক্ষেত্রের একটিতে ৪০ শতাংশের বেশি বাজার হিস্যাধারী হলে এসএমপি অপারেটর হিসেবে ঘোষণা করা যায়। এসএমপির আন্তর্জাতিক রীতি হলো, যথাযথ পর্যালোচনার পরে বাজারের দুর্বলতা খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। সাধারণত বাজারে কারও একচ্ছত্র আধিপত্য ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে গ্রামীণফোনের দাবি, তারা বাজারে এমন কোনো আচরণ করছে না, যা চলমান প্রতিযোগিতাকে ক্ষুণœ করে।

এসএমপির অধীনে গত বছর ১৮ মার্চ চারটি নির্দেশনা দিয়েছিল বিটিআরসি। এর প্রেক্ষিতে গ্রামীণফোন আদালতে যায়। পরে বিটিআরসি নিজ উদ্যোগে সেগুলো প্রত্যাহার করে নেয়। একই বছর ৩০ মে আবার চারটি নির্দেশনা আরোপ করে বিটিআরসি। এ নিয়েও গ্রামীণফোন আদালতে যায়। ফলে তা আর আরোপিত হয়নি। পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের ২১ জুন নতুন করে দুটি বিধিনিষেধ আরোপ করে বিটিআরসি, যার বিরুদ্ধে আদালতে রিট আবেদন করে গ্রামীণফোন। রিট আবেদনের শুনানি হওয়ার আগেই গত ২৮ জুন নতুন আরেকটি বিধিনিষেধ জারি করে বিটিআরসি। এতে বলা হয়, গ্রামীণফোন আগামী ১৬ জুলাই থেকে কল আদান-প্রদান বা টার্মিনেশন থেকে ‘অরিজিনেটিং’ অপারেটর থেকে প্রতি মিনিটে ১০ পয়সার বদলে ৭ পয়সা করে পাবে। অন্যরা আগের মতো ১০ পয়সাই পাবে।

এসএমপি বিষয়ে বিটিআরসি ২০১৮ সালে একটা প্রবিধিমালা জারি করে। এ প্রবিধিমালা অনুযায়ী কোনো মোবাইল অপারেটর এসএমপি হলে বাজারে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় তার ওপরে বিটিআরসি কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে অন্যান্য অপারেটরের তুলনায়।

বাজারে একমাত্র এসএমপি মোবাইল অপারেটর হচ্ছে গ্রামীণফোন। এই কারণে বিটিআরসি গ্রামীণফোনের ওপর বিধিনিষেধ দিয়েছে। বিটিআরসির হিসাবে মে মাস শেষে দেশে মোট মোবাইল গ্রাহক ছিল ১৬ কোটি ১৫ লাখ ৬ হাজার। এর মধ্যে ৭ কোটি ৪২ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক নিয়ে শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন। অর্থাৎ দেশের মোট মোবাইল গ্রাহকের প্রায় ৪৬ শতাংশ গ্রামীণফোনের। এছাড়া রবির ৪ কোটি ৮০ লাখ ৩২ হাজার, বাংলালিংকের ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৪০ হাজার এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার গ্রাহক রয়েছে।