দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়ন ও লেনদেন বৃদ্ধির জন্য খুব শিগগির অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) চালু করা হবে। পৃথক একটি প্ল্যাটফর্মে তৈরি হওয়া এই বিকল্পবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের শেয়ার, অতালিকাভুক্ত প্রাইভেট কোম্পানি ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন করার সুযোগ রয়েছে।

রও পড়ুন…

ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি

এতে পুঁজিবাজার থেকে সরকারের রাজস্ব আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি এটিবিতে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানিগুলোর করপোরেট গভার্ন্যান্স শক্তিশালী হবে এবং সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পুঁজিবাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির জন্য বর্তমানে বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। পুঁজিবাজার উন্নত হলে অর্থায়নের জন্য বর্তমানে ব্যাংক নির্ভরতা হ্রাস পাবে এবং কাক্সিক্ষত শিল্পায়নে ভূমিকা রাখবে। বিএসইসি আশা করে, অতীতের ন্যায় পুঁজিবাজার দেশের রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে ও জিডিপিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহযোগিতা ও সমর্থন লাভ করবে।

বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক এবং মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, পুঁজিবাজারের স্বার্থে এটিবি চালুর কার্যক্রম চলছে। বিষয়টি নিয়ে ডিএসই কাজ করছে। সব ঠিক থাকলে এ বছর শেষ হওয়ার আগেই এটিবি চালু হবে। এটিবি প্ল্যাটফর্মের আওতায় পুঁজিবাজারের মূল বোর্ড ও ন্যূনতম ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত মূলধন রয়েছে, এমন স্বল্প মূলধনি কোম্পানি বাদে বাকি সব ধরনের সিকিউরিটিজ লেনদেন করতে পারবে।

এক্ষেত্রে ১৯৬৯ সালের দ্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্সে সিকিউরিটিজের সংজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ১৯২০ সালের সিকিউরিটিজ আইনে সংজ্ঞায়িত যে কোনো ধরনের সরকারি সিকিউরিটিজ, কোম্পানির বন্ধকিকৃত সম্পদ, হস্তান্তরযোগ্য শেয়ার, ডিবেঞ্চার, ডিবেঞ্চারস স্টক, বন্ড, বিনিয়োগ চুক্তি, ডেরিভেটিভ, কমোডিটি ফিউচারস কন্ট্রাক্ট ও অপশনস কন্ট্রাক্ট নতুন এ প্ল্যাটফর্মের আওতায় লেনদেন করা যাবে।

তবে মূলধন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এটিবিতে তালিকাভুক্ত হওয়া যাবে না। শুধু একটি লেনদেন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিক্রেতার অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি ক্রেতার শেয়ারপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করবে এটিবি। এ প্ল্যাটফর্মের সিকিউরিটিজকে এটিবিতে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ হিসেবে অভিহিত করা হবে।

এ প্ল্যাটফর্মের আওতায় লেনদেনের সুবিধা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ইস্যুয়ারকে স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে আবেদন করতে হবে। এজন্য ইস্যুয়ার একজন মার্চেন্ট ব্যাংকারকে নিয়োগ করতে পারবে। আবেদন পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে স্টক একচেঞ্জ আবেদন গ্রহণ কিংবা প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।

কমিশন পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে শুনানির সুযোগ প্রদানসাপেক্ষে এটিবি প্ল্যাটফর্মে থাকা যে কোনো সিকিউরিটিজের লেনদেন স্থগিত করতে পারবে। স্টক ডিলার কিংবা স্টক ব্রোকারের মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদিত প্রক্রিয়ায় এটিবিতে থাকা সিকিউরিটিজের লেনদেন সম্পন্ন হবে। সিকিউরিটিজের ধরন অনুসারে স্টক এক্সচেঞ্জ এটিবির লেনদেন প্ল্যাটফর্মের শ্রেণিকরণ করবে। এক্ষেত্রে অকশন ও নেগোশিয়েশন নামে দুটি শ্রেণি থাকবে।

স্টক এক্সচেঞ্জ এটিবির সিকিউরিটিজের জন্য প্রযোজ্য সব ধরনের ফি, কমিশন ও চার্জ নির্ধারণ করবে। কমিশনের অনুমোদনক্রমে এক্সচেঞ্জ এটিবির সিকিউরিটিজের জন্য প্রতিবেদন জমা, ডিসক্লোজার ও তথ্য প্রদানের শর্তাবলি নির্ধারণ করবে। কমিশনের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে এক্সচেঞ্জ এ আইনের আওতায় এটিবি অপারেশনাল হ্যান্ডবুক প্রকাশ করবে, যা এ আইনের একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।

প্রস্তাবিত খসড়া অনুসারে, এ আইনের কোনো বিষয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে সে বিষয়ে কমিশন ব্যাখ্যা প্রদান করবে। কমিশন প্রয়োজনবোধে এ আইনের আওতায় নির্দেশনা ও গাইডলাইন তৈরি করবে। এছাড়া যে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে কমিশন বিধিনিষেধ কিংবা শর্ত আরোপ করতে পারবে। এ আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে কমিশন। তাছাড়া বিশেষ ক্ষমতাবলে কমিশন এ আইনের যে কোনো বিধান পরিপালন থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে পারবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি একটি ভালো পদক্ষেপ। এর ফলে পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা অসংখ্য কোম্পানি, বন্ডসহ সব ধরনের সিকিউরিটিজের শেয়ার লেনদেনের একটি আইনি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে। এছাড়া মূল বোর্ডের তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের তুলনায় এটিবিতে রেগুলেশন পরিপালনের ক্ষেত্রেও অনেকাংশেই ছাড় দেওয়া হয়েছে।

যথাযথভাবে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে এটিবি প্ল্যাটফর্ম মূল বোর্ডের চেয়েও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা তাদের। আগামী তিন মাসের মধ্যেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এটিবি প্ল্যাটফর্ম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক্সচেঞ্জটির কর্মকর্তারা।