দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকঋণের সুদহার বেঁধে দিয়েছে সরকার। ৬ শতাংশে আমানত ও ৯ শতাংশে ঋণ বিতরণ কার্যকর করা হয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে উদ্যোক্তা ও ঋণগ্রহীতারা স্বস্তি পেলেও উচ্চ সুদের কারণে অস্বস্তিতে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে।

রও পড়ুন..

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা উচ্চ সুদের কারণে অস্বস্তিতে

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরি করার কাজ হচ্ছে: শিবলী রুবাইয়াত

পুঁজিবাজারের ঊর্ধ্বমুখী গতিশীলতায় উচ্চ সুদের এই ঋণে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা উপকৃত হলেও মন্দাবাজারে শঙ্কা তৈরি করে। সূচকের উত্থান-পতন স্বাভাবিক নিয়ম হলেও নিম্নমুখী পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীর শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়ে। স্থিতিশীল পুঁজিবাজার হঠাৎ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফোর্সড সেলের ঘটনাও ঘটে।

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা বিদ্যমান শেয়ার জিম্মি রেখে মার্চেন্ট বা ব্রোকারেজ হাউস থেকে মার্জিন ঋণ নেয়। বর্তমানে পুঁজিবাজারে এক টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে ৫০ পয়সা ঋণ নেওয়া যায়। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে কোনো বিনিয়োগকারীর এক লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকলে, ওই শেয়ারের বিপরীতে তিনি ৫০ হাজার টাকা মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন।

করোনা-পরবর্তীতে পুঁজিবাজার সামনে এগোনোর আশা জাগাচ্ছে। এ অবস্থায় মার্জিন ঋণে বাজার যেন ফুলেফেঁপে না উঠে সে বিষয়ে সজাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। মূল্যসূচক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্জিন ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর মার্জিন ঋণ প্রদানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ডিএসইএক্স সূচক চার হাজারের নিচে থাকাকালীন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক গ্রাহককে সর্বোচ্চ ১:০.৭৫ ঋণ দিতে পারবে। অর্থাৎ কোনো গ্রাহক নিজস্ব এক টাকার বিপরীতে সর্বোচ্চ ০ দশমিক ৭৫ টাকা মার্জিন ঋণ নিতে পারবে। একইভাবে ৪০০১-৭০০০ পর্যন্ত সূচকের ক্ষেত্রে ১:০.৫০ হারে ও ৭০০০ পয়েন্টের ওপরে সূচকের ক্ষেত্রে ১:০.২৫ হারে মার্জিন ঋণ দিতে পারবে।

বিনিয়োগকারী ও মার্চেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মার্জিন ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম-নীতি নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচলিত ব্যাংকিং চ্যানেলে সুদহার বেঁধে দিলেও মার্জিন ঋণের ক্ষেত্রে তেমন কোনো নীতিমালা নেই।

মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, মার্জিন ঋণের উৎস ও বিতরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো নির্দেশনা নেই। গ্রাহকের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নন-ব্যাংকিং আর্থিক উৎস থেকে উচ্চ সুদে ঋণ সংগ্রহ করে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করে। তফসিলি ব্যাংকের মতো মার্জিন ঋণের উৎস ও সুদহার বেঁধে দিলে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হতেন।

জানা গেছে, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের দেওয়া মার্জিন ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। শীর্ষ ৩২ মার্চেন্ট ব্যাংক সুদসহ গ্রাহকদের কাছে পাবে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা আর ৯৭ ব্রোকারেজ হাউস পাবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘মার্জিন ঋণের সুদ বেশি হওয়ায় পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়ছে। সরকার ছয়-নয় সুদহার বাস্তবায়ন করেছে কিন্তু পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা সেই সুযোগ পাচ্ছেন না। আগে মার্জিন ঋণে সুদহার যা ছিল, এখনো তাই-ই নেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘মার্চেন্ট ব্যাংক অন্য কোনো তফসিলি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগকারীকে দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে প্রচলিত সুদহারের চেয়ে ২-২.৫ শতাংশ বেশি নিতে পারে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে গলাকাটা সুদ নেওয়া হচ্ছে।’

মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘মার্জিন ঋণের সুদের নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। যে যার মতো সুদ নেয়। বর্তমানে সুদহার ১৬-১৭ শতাংশ পর্যন্ত প্রচলিত আছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চহারে তহবিল আনার কারণে সুদহার বেশি। কারণ ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যায় না। আজ পর্যন্ত মার্জিন ঋণের সোর্সিং ঠিক করা সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্জিন ঋণের সুদ ও সোর্সিং ঠিক করে দিলে উপকৃত হতো। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা হয়নি। গ্রাহক ধরে রাখতে মার্চেন্ট ব্যাংক যে যার মতো করে সুদ নিচ্ছে।’