দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সংকটে পড়েছে দেশে ব্যবসা করা জীবন বীমা কোম্পানিগুলো। ৩২টি জীবন বীমার মধ্যে বর্তমানে ১৬টিতেই নেই সিইও। ফলে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তি ছাড়াই চলছে এসব কোম্পানি। এমনকি কোনো কোনো কোম্পানি সাত বছরেও সিইও নিয়োগ দেয়নি। অথচ বীমা আইন অনুযায়ী ৬ মাসের বেশি সিইও পদ খালি রাখার সুযোগ নেই।

রও পড়ুন…

সপ্তাহজুড়ে বীমা খাতে ঝড়, দরপতনের শীর্ষে ৪ কোম্পানি 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত সিইও না থাকা জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে তিনটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে- পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স এবং সানলাইফ ইনস্যুরেন্স।

রও পড়ুন…

পুঁজিবাজারে হঠাৎ বিদেশী বিনিয়োগের হিড়িক 

সিইও না থাকা বাকি কোম্পানিগুলো হলো- সানফ্লাওয়ার লাইফ ইনস্যুরেন্স, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইনস্যুরেন্স, প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, স্বদেশ লাইফ ইনস্যুরেন্স, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স, আলফা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, বেস্ট লাইফ ইনস্যুরেন্স, চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স, গোল্ডেন লাইফ ইনস্যুরেন্স, যমুনা লাইফ ইনস্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সসহ আরও একটি।

বীমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩২টি জীবন বীমার মধ্যে ১৬টিতেই সিইও নেই, এ দৃশ্য দেখে যে কারও মনে হতে পারে বীমা খাত সিইও’র সংকট রয়েছে। বাস্তবতা হলো- সিইও হওয়ার যোগ্য লোকের অভাব নেই। কিন্তু মালিক পক্ষ এমন সিইও খোঁজেন যাকে নিয়োগ দিলে তাদের সুবিধা হবে। এ কারণে অনেক সময় যোগ্য সিইও পাওয়া যায় না। আবার এমন ঘটনাও ঘটে, মালিক পক্ষকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও কোনো কোনো সিইও কোম্পানিতে টিকতে পারেন না। এসব কারণেই এখন বীমা খাতে এক ধরনের কৃত্রিম সিইও সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে মুখ্য বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা-২০১২ অনুযায়ী, বীমা কোম্পানির সিইও’র শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে ৩ বছরের স্নাতক ও এক বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি। এছাড়া একই শ্রেণির বিমা কোম্পানিতে ১৫ বছরে চাকরির অভিজ্ঞতাসহ এমডির অব্যবহিত নিম্নপদে ৩ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে বীমা বিষয়ক উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের জন্য অভিজ্ঞতা শর্তসাপেক্ষে ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত শিথিল করা যাবে। বয়সের সীমা বেধে দেয়া হয়েছে ৪০ থেকে ৬৭ বছরের মধ্যে।

আইন অনুযায়ী, বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ ৩ মাসের বেশি খালি রাখা যাবে না। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) অনুমোদন দিলে সিইও নিয়োগের জন্য আরও তিন মাস সময় পাওয়া যাবে। সবমিলিয়ে ৬ মাসের বেশি সিইও পদ খালি রাখার সুযোগ নেই। কোনো কোম্পানিতে সিইও পদ ৬ মাস শূন্য থাকলে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে বীমা আইনে।

জুনে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল লাইফের সিইও জামাল এম এ নাসের মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকে কোম্পানিটিতে নিয়মিত সিইও নেই। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাকি দুই কোম্পানির মধ্যে পদ্মা ইসলামী লাইফে ২০১৯ সালের মে মাস থেকে এবং সানলাইফে চলতি বছরের জুন থেকে সিইও নেই।

২০১৩ সালের জুলাই মাসে অনুমোদন পাওয়ার পর থেকেই মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ছাড়া চলছে চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স। সম্প্রতি কোম্পানিটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম জিয়াউল হককে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা করতে আবেদন করা হলেও আইডিআরএ এখনও তা অনুমোদন করেনি।

এরআরবি গ্লোবাল লাইফে নিয়মিত সিইও নেই ২০১৭ সাল থেকে। চলতি বছরের মার্চ থেকে সিইও নেই ট্রাস্ট ইসলামী লাইফে। চলতি বছরের ২০ জুলাইতে মারা যান মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফের সিইও বোরহান উদ্দিন মজুমদার। এরপর থেকেই পদটি শূন্য রয়েছে।

আলফা ইসলামী লাইফে সিইও নেই ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে। অনিয়মের কারণে ডুবতে বসা গোল্ডেন লাইফের সিইও নেই চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে। স্বদেশ লাইফে সিইও নেই ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে। চলতি বছরের মার্চ থেকে শূন্য রয়েছে সানফ্লাওয়ার লাইফের সিইও পদ। বেস্ট লাইফে সিইও নেই ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে। যমুনা লাইফে সিইও নেই চলতি বছরের এপ্রিল থেকে। সোনালী লাইফ ও প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফে নিয়মিত সিইও নেই চলতি বছরের জুন থেকে।