দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘ মন্দা প্রবণতার আগ্রাসন কাটিয়ে পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। টানা গত ৯ সপ্তাহ ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে। এর সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনও। শুধুতাই নয়, সূচক ও লেনদেন বাড়ার প্রভাবে ডিএসই’র বাজার মূলধন অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টর নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সব মহলেই এখন আগ্রহ বাড়ছে। প্রায় ১০ বছর পর অনেকেই সম্ভাবনা দেখছেন এই বাজার নিয়ে। এরই মধ্যে বাজারে নতুন নতুন বিনিয়োগও আসতে শুরু করেছে।

রও পড়ুন…

ছয় ইস্যুতে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার আভাস 

বিদায়ী সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৯০ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট। আর এই সপ্তাহে বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। ফলে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে আরও একটি সপ্তাহ পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার।

রও পড়ুন…

প্রথম প্রহরেই বর্তমান কমিশন তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার করার মিশনে সামিল হয়েছে। এরই মধ্যে কমিশন বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ছয়টি কারণ তুলে ধরেছেন। কারণগুলো হলো:

এক. নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং সরকারি অন্যান্য সংস্থার মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা ছিল, তা কমে এসেছে। এক্ষেত্রে এসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান নিজেই চলে যাচ্ছেন বিভিন্ন সংস্থার কাছে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে।

দুই. ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদের হার কমার একটা প্রভাব পড়েছে বাজারে।

তিন. ব্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। শেয়ার বাজারেও তারল্যের কোনও সংকট নেই। যে কারণে বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

চার. প্রত্যেক ব্যাংককে শেয়ার বাজারের জন্য ২০০ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা এখন ছাড় হচ্ছে। অর্থাৎ এই টাকা পুঁজিবাজারে আস্তে আস্তে আসছে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে।

পাঁচ. বড় বিনিয়োগকারীদের অনেকে এতদিন বাইরে বসে পর্যবেক্ষণ করছিল। এখন তারাও বাজারে আসতে শুরু করেছে।

ছয়. ফ্লোর প্রাইস থাকার কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এটিকে নিরাপত্তা হিসেবে দেখছেন। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে।

আহমেদ রশিদ লালী জানান, গত ১০ বছরে অন্তত ২৭ বার বাজার উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলোর ইন্টারভেনশন ও ইনডেক্স কনট্রোল করার কারণে সেটা পারেনি। কারণ, বাজার যখনই উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে তখনই চাপ প্রয়োগ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, এই বাজারকে এখন নিজস্ব শক্তিতে চলতে দিতে হবে।

বাজারে কোনওভাবেই ইন্টারভেনশন ও ইনডেক্স কনট্রোল করা ঠিক হবে না। এছাড়া সিন্ডিকেটেড রেট (কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ সিন্ডিকেট করে কোনও কোম্পানির দাম নিজেরা বাড়িয়ে ও কমিয়ে বেচা-কেনা করে) নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর বাজারে কোনও পক্ষই যাতে ব্যাড প্লে করতে না পারে সে দিকেও নজর রাখার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, বাজার বিনিয়োগকারী বান্ধব হবে তখনই, যখন সব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুশাসন থাকবে।

একমত পোষণ করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, একদিকে বাজারে তারল্যের সমস্যার সমাধান হয়েছে। অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইস থাকার কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচকভাবে দেখছেন। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু ভূমিকার কারণেও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।