সিকিউরিটিজ হাউসগুলোর অনিয়মে হার্ডলাইনে বিএসইসি
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও সিকিউরিটিজ হাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছুই নয়। প্রায় প্রতিদিনই এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন না কোন অভিযোগ ওঠেই থাকে। আর দেরীতে হলেও পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) জরিমানা কিংবা সতর্ক করার মতো শাস্তি প্রদান করে থাকে।
মুলত পুঁজিবাজারে কারসাজির ঘটনা সাধারণত ব্রোকারেজ হাউস থেকে ঘটে। কারণ হাউস থেকেই কারসাজি বা অস্বাভাবিক লেনদেনের ঘটনা ঘটে। তাই যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে কারণে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে সতর্ক করছে বিএসইসি।
এ লক্ষ্যে গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তিনটি ব্রোকারেজ হাউসকে ভবিষ্যতে সিকিউরিটিজ-সংক্রান্ত আইন মেনে চলতে সতর্কপত্র জারি করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ব্রোকারেজ হাউস তিনটি হলো-সিনহা সিকিউরিটিজ, মোর্শেদ সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং ই-সিকিউরিটিজ লিমিটেড।
সিকিউরিটি আইন ভঙ্গ করায় উল্লিখিত ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে ভবিষ্যতে সিকিউরিটিজ-সম্পর্কিত সব আইন মেনে চলার জন্য সতর্কতাপত্র জারি করেছে বিএসইসি। ব্রোকারেজ হাউসগুলো সাধারণত যেসব অনিয়ম করে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করার বিপরীতে মার্জিন ঋণ প্রদান না করা।
অনেক সময় হাউসগুলো ৪০-এর ঊর্ধ্ব শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত রয়েছে, এমন শেয়ারের বিপরীতে মার্জিন ঋণ প্রদান করে। এটাও সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন। একইভাবে অনেক হাউস নিজেদের কাছের লোক বা আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ম না মেনে শেয়ার কেনাবেচার সুবিধা প্রদান করে। একই সঙ্গে নিয়ম না মেনে ঋণ সুবিধা প্রদান করে-এসবই অনিয়ম। আবার কোনো হাউস থেকে নির্দিষ্ট একটি শেয়ার অস্বাভাবিকভাবে কেনাবেচা হলেও হাউসগুলোকে সতর্ক করে বিএসইসি।
বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সে কারণে পুরো বাজারই নজরদারিতে রয়েছে। কোনো ব্রোকারেজ হাউসে কোনো ধরনের অনিয়ম বা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা ঘটলেই ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএসইসি। একইভাবে বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য যেসব কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে, এ ধরনের স্বল্প মূলধনি কোম্পানির বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা।
সম্প্রতি এ ধরনের কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, কমিশনার অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও অতিরিক্ত পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে গঠিত কমিটিকে স্বল্প মূলধনের কোম্পানিগুলোর জন্য করণীয় নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
একইভাবে যেসব কোম্পানির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই-রেশিও ৪০-এর বেশি রয়েছে, সেগুলোর কারণ অনুসদ্ধান করতে বলেছে বিএসইসি। এসব কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ৪০-এর বেশি পিই-রেশিওধারী কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ খুঁজে বের করতে। একই সঙ্গে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে ৪০-এর বেশি পিই রেশিওর কোনো কোম্পানিকে বিএসইসির নির্দেশনা অমান্য করে মার্জিন ঋণ দেয়া হচ্ছে কি না, তা অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে বিএসইসির চিঠিতে।
এ বিষয় নিয়ে আলাপ করলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক এবং মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারির মধ্যে রেখেছি। কিন্তু আমরা একা সজাগ থাকলে চলবে না। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে বিনিয়োগকারীদের।’