কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে লুকোচুরি, হার্ডলাইনে বিএসইসি!
এফ জাহান ও মিজানুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই এমন হেলাফেলা উত্তরের বিষয়ে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রয়োজনে কোম্পানিগুলোর সংবেদনশীল তথ্য যাচাই করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশে পরিদর্শন করবে ডিএসই এবং সিএসই। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও অনেক কম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। তবে এ পরিস্থিতিতে কম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম অতিমাত্রায় বেড়ে যাচ্ছে কি না সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জসহ বিএসইসি।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক মাসে ৬ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারে ৩১টি কোম্পানির কাছে শেয়ারের দাম বাড়ার পেছনে কোনো মূল সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে কি-না জানত চেয়ে চিঠি দিয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো: ইমাম বাটন, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, জুটস স্পিনার্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, সালভো কেমিক্যাল, ঢাকা ডায়িং, জনতা ইন্স্যুরেন্স, ম্যাকসন স্পিনিং,
রিজেন্ট টেক্সটাইল, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, রিং শাইন টেক্সটাইল, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, আলনিমা ইয়ার্ন, সাফকো স্পিনিং, শ্যামপুর সুগার, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, স্টাইল ক্রাফট, এইচআর টেক্সটাইল, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, মোজাফফর হোসাইন স্পিনিং মিলস, আল-হাজ্জ টেক্সটাইল মিলস, রহিমা ফুড করপোরেশন, মিথুন নিটিং, মেট্রো স্পিনিং, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, বিচ হ্যাচারি, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, শ্যামপুর সুগার মিলস ও মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ।
সূত্র জানায়, প্রায় প্রতিদিনই সেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, তাদের চিঠি দিয়ে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) রয়েছে কি না তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। তবে কম্পানিগুলো গত্বাঁধা উত্তর দিয়ে খুশি থাকলেও মোটেও সন্তুষ্ট নয় সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তাই এই পরিস্থিতি স্বচ্ছতার সঙ্গে উত্তরণের লক্ষ্যে বিধিমালা পরিবর্তন করে কঠোরতা আরোপ করতে যাচ্ছে সংস্থাটি।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, কমিশন লক্ষ করেছে, কোম্পানিগুলো তাদের শেয়ারের দাম বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই জানানোর কিছুদিন পর দেখা যায়, ওই কম্পানিই মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেছে। তখন স্টক এক্সচেঞ্জ জিজ্ঞাসাবাদ করলে কম্পানিগুলো জানায়, সংশ্লিষ্ট তারিখে পরিচালনা পর্ষদে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি স্বচ্ছতার সঙ্গে উত্তরণে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই তারা এসংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।
সূত্র জানায়, সংবেদনশীল তথ্যের ভিত্তিতে লেনদেনের বিধিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। কোন বিষয়টি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য, কোন কোন বিষয় মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের মধ্যে পড়বে এবং ওই তথ্য কখন প্রকাশ করতে হবে এমন সব বিষয় ওই বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে শেয়ারের মূল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে কম্পানি সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করছে কি না, তা যাচাই করে দেখবে বিএসইসি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, শেয়ারের দাম বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে কোম্পানিগুলো উত্তর দেয় তা প্রকৃতপক্ষে সঠিক নয়। আসল ঘটনা আড়াল করতে কোম্পানিগুলো এ ধরনের আচরণ করে থাকে। অধিকাংশ সময়ই সংবেদনশীল তথ্য গোপন করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি। পরে শেয়ারের দাম বেড়ে যাওয়ার পর মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে। শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়াতেই এ কাজ করে কোম্পানিগুলো। তাই এ বিষয়টি উভয় স্টক এক্সচেঞ্জসহ বিএসইসির আরও বিশদভাবে খতিয়ে দেখা উচিত।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কমিশন কাজ করছে। মূল সংবেদনশীল তথ্যের ভিত্তিতে লেনদেনের বিধিমালা ১৯৯৫ সংশোধনের কাজ চলছে। সেখানে- কোন বিষয়টি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য, কোন কোন বিষয় মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের মধ্যে পড়বে এবং ওই তথ্য কখন প্রকাশ করতে হবে এসব বিষয় ওই বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তখন শেয়ারের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কোম্পানিগুলোর আর আর গৎ বাঁধা উত্তর দিতে আর পারবে না বলে আশা করছি। তবে স্টক এক্সচেঞ্জ চাইলে বিএসইসির অনুমতি সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সরেজমিন পরিদর্শন করতে পারে।’